সর্বশেষ

সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি

ঢাকা : সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে গৃহশ্রমিকদের শারীরিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় সংসদে বিরোধী দলের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অবিলম্বে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি জানান। জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আপনাদের (বিরোধী দল) থেকে সরকার বেশি চিন্তিত। ইতোমধ্যে এবিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ সংক্রান্ত প্রথম প্রশ্নটি উত্থাপন করেন গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। এরপর প্রশ্ন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্ন ও কাজী ফিরোজ রশীদ। আর এই প্রশ্ন উত্থাপনকালে নারী শ্রমিকদের নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে রীতিমতো বক্তৃতা করেন এমপিরা। এনিয়ে অধিবেশন কক্ষে স্বল্প সময়ের জন্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রশ্ন রেখে বলেন,দেশের মান-মর্যাদা ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে মহিলা শ্রমিক না পাঠিয়ে পুরুষ শ্রমিককে পাঠান। তাহলে ভাল হবে, দেশের মানও বাঁচবে আমাদের মান ইজ্জতও বাঁচবে। পারিবারিক পরিবেশ সুন্দর থাকবে। দেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে, না হলে আমরা দাসত্বের বাংলাদেশে পরিণত হবো। জবাবে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন,সবকিছু যেভাবে চিন্তা করা হয়, সেভাবে হয় না। সৌদি, মালয়েশিয়া যেখানেই বলেন শ্রমবাজার অনুযায়ী ওনারা যেভাবে চায়, সেই হিসেবেই তো শ্রমিক পাঠাতে হবে। না হলে পাঠানোর দরকার নেই। যখন বলা হয় মানুষ পাঠাও, মানুষ চাইলে তো মানুষ পাঠাবো। না চাইলে ওখানে ঠেঁলে তো মানুষ পাঠাতে পারবো না। আমরা চেষ্টা করবো মহিলারা যেন সন্মানজনভাবে ওখানে চাকরি করতে পারে, আর যদি একেবারেই না করতে পারে তাহলে দেখবো, চিন্তা করবো না পাঠাতে। কথাটা সবকিছু শ্রম বাজার যেখানে যত মানুষ পাঠাতে পারি, এটা দেশের স্বার্থে। সেই হিসাব সবাইকে করতে হবে। এরপর মুজিবুল হক চুন্ন মহিলা কর্মীদের উজ্জত রক্ষার জন্য কোন রকম উদ্যোগ নিয়েছেন কী না জানতে চাইলে জবাবে মন্ত্রী বলেন,গৃহকর্মীর ব্যাপারে আপনারা যত চিন্তিত এরচেয়ে বেশি কিন্তু সরকারই চিন্তিত। সেই ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ এরইমধ্যে নেয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগেই এখানে সৌদি আরবের চার্জ দি এ্যাফেয়ারর্সকে আমার অফিসে ডেকেছিলাম। বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে। রিয়াদে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, ওখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়গুলো উত্থাপনের জন্য। আগামী ২৬ ও ২৭ নবেম্বর সৌদি আরবে যৌথসভা হবে, সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, নির্যাতনের যে অভিযোগ যেটা আছে, কেন নির্যাতিত হয় এবং এখান থেকে যেসকল মহিলাদের পাঠাই কোনো ব্রিফিং না দিয়ে, কোনো ট্রেনিং না দিয়ে, কিছু না দিয়ে রিক্রুুটিং এজেন্সীর এজেন্টরা গৃহকর্মী পাঠিয়ে দেয়। আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এরপর গৃহকর্মী যারা যাবে তাদের কমপক্ষে এক মাসের ট্রেনিং দিতে হবে। যাতে ওখানে গিয়ে নির্যাতিত না হয়। যাতে সুরক্ষার জন্য আইনী ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ ওনারা নিতে পারেন। এরআগে কাজী ফিরোজ রশীদ প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নিয়ে বলেন, আমাদের ঘরে মা বোন নাই, কেন তাদের কয়েকটা টাকার জন্য পাঠাবো? মহিলাদের সৌদি আরব যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। আমাদের দূতাবাস কোনো পদক্ষেপ নেয়না। নিহত সবার ময়দাতদন্তে বলা হয়,স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সব ময়নাতদন্ত ওরাই করে। কি দরকার তাদেরকে সৌদি আরবে পাঠানো। আমরা তো এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ না। মন্ত্রী কোনো খবর রাখেন না। জবাবে মন্ত্রী বলেন, মাঠের বক্তৃতা সুন্দরই শুনলাম। মন্ত্রী যে কিছু জানেন না, কিছু করে না, এটা মাঠের বক্তৃতার মতই। বিভিন্ন নারী যারা ওখান থেকে লাশ হয়ে আসছেন, যারা নির্যাতিত হয়ে আসছেন- আমরা কিন্তু বসে নেই। গত কয়েক মাসে ১৬০টি ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত করেছি। এরইমধ্যে তিনটি লাইসেন্স বাতিলও করেছি। যারা অনিয়ম করেছি ও জরিমানাও করেছি। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। যে এজেন্ট এখান থেকে পাঠায়, ওদের আইন করে দিচ্ছি, যারা বিদেশে গেছে বা যাচ্ছে তাদের সম্পূর্ণ বিস্তারিত আমাদের দিতে হবে। দরকার হলে ওদের ওপর মামলা করতে পারি। সরকারী দলের সদস্য মো. হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, বিদেশে কর্মরত অবস্থায় কোন কর্মী মারা গেলে সাধারণত নিয়োগকর্তার খরচে মৃতদেহ দেশে আনা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আনা সম্ভব না হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে সেসব কর্মীর মৃতদেহ দেশে আনা হয়। এমনকি অবৈধ কোন নাগরিক বিদেশে মারা গেলে তার লাশ ও সরকার দেশে আনার ব্যবস্থা করে থাকে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের দাবি"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*