তুহীন পারভেজ, বগুড়া থেকে : করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সন্ধ্যা নমতেই শহরের চারিদিকে নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে পুলিশ আর সেনা সদস্যদের গাড়ির টহল। একজন মানুষ মটরসাইকেলে হ্যান্ড মাইক নিয়ে শহরের অলিগলিতে প্রচার করছেন করোনা থেকে বাঁচতে সকলকে ঘরে থাকতে। নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে চলতে হবে। প্রচারের পাশাপাশি মানুষটি প্রবেশ করছেন শহরের অতিদরিদ্র বাসায়। সেই সব বাসায় খাদ্য সংকটে থাকা মানুষগুলির হাতে তুলে দিচ্ছেন নিজের বেতনের টাকায় কেনা কিছু তৈরী খাবার প্যাকেট।
সাধারণ ছুটির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন দেশের সর্বপ্রাচীন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) বগুড়া শাখার জেলা কর্মকর্তা অরুন কুমার শীল। মহামারী নভেল-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এসময় বগুড়ার একটিমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এফপিএবি, যারা সরকারের সাথে একত্রিতভাবে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে তারা কেউই জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে অফিস বা ক্লিনিক বন্ধ করেনি। জীবনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেও প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সেবা দিচ্ছে সাধারণ রোগীদের।
পহেলা বৈশাখের দিনও বগুড়া শহরের সেউজগাড়িস্থ ক্লিনিকে দেখা যায়, অসহায় দরিদ্র বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বগুড়া শাখার ৬০ জন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবিকা (আরএইচপি) জেলার সদর উপজেলা, সারিয়াকান্দি, গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার সক্ষম দম্পতিদের বাড়ীতে বাড়িতে গিয়ে করোনায় করণীয় বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিসহ পরিবার পরিকল্পনা জš§নিরোধক সামগ্রী বিতরণ করছেন। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে শহরে মাইকিং করে লিপলেট বিতরণ করে করোনা সচেতনতা সৃষ্টিতে। বর্তমানে ক্লিনিকে সেবাদান, মাঠ পর্যায়ে সেবাদানের পাশপাশি শহরের জনসমাগম ঠেকাতে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সহযোগিতা করছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা: মো: গউসুল আজিম চৌধুরী জানান, করোনার মত এমন দু:সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তবে এ মুহুর্তে সাধারণ রোগীদের সেবাপ্রদানের স্বল্পতা রয়েছে। এই অবস্থায় এফপিএবি বগুড়া শাখা প্রতিদিন ক্লিনিক খোলা রেখে সাধারণ মানুষের সেবাপ্রদান করছে, যা অত্যান্ত প্রশংসনীয়।
এফপিএবির কার্যক্রম নিয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, দেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের সুতিকাগার এফপিএবি। আর বগুড়া শাখা আমাদের সাথেই সরকারের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে কাজ করে থাকে। যা অত্যান্ত সন্তোষজনক। করোনার মত দুর্যোগকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি সাধারণ ছুটির মধ্যেও এফপিএবি ক্লিনিকে সেবাদান সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ জানান, এফপিএবি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনের সাথে প্রতিষ্ঠানটির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। করোনা আক্রান্তকালে তারা ক্লিনিক খোলা রেখে সাধারন মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে।
এফপিএবি’র বগুড়ার জেলা কর্মকর্তা অরুণ কুমার শীল জানান, এফপিএবি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। শুধু করোনা পরিস্থিতি নয়, অতীতেও যে কোন সংকটে সরকারের সাথে জনগণের সেবা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক খন্দকার মো. আসাদুজ্জামানের সার্বিক নির্দেশনায় আমরা সাধারণ মানুষের সেবাপ্রদান করে যাচ্ছি। শুধু সেবা নয়, খাদ্য সংকটে থাকা অনেক মানুষকে রাতে আধারে খাবার পৌছে দিয়েছি। এক্ষেত্রে বগুড়া জেলা প্রশাসকসহ সরকারী কর্মকর্তারাও তাদেরকে অনুপ্রাণিত করছেন বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সাল থেকে দেশের মা ও শিশুদের কল্যাণে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করে এফপিএবি। ১৯৬৫ সালে সরকারি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু’র পর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের সহায়ক হিসেবে দেশের ৩২টি জেলায় কাজ করে আসছে এফপিএবি। করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরও মানুষের পাশে আছে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সারাদেশে এফপিএবি পরিচালিত ক্লিনিকগুলোতে সেবা প্রদানের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ১৯ এপ্রিল ২০২০ ইং
Be the first to comment on "বগুড়ায় করোনা দূর্গতদের পাশে এফপিএবি’র অরুন শীল"