ঢাকা : বরাদ্দ বৃদ্ধির সাথে বাজেটের সঠিক ব্যবহারের নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে পরিবার পরিকল্পনার মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে এ্যাডভানস ফ্যামিলি প্লানিং, মেরী স্টোপস বাংলাদেশ ও টিম এসোসিয়েটস। এ্যাডভানস ফ্যামিলি প্লানিং-এর মিডিয়া এডভোকেসি টিম লিডার পুলক রাহা স্বারিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর পরিবার পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও সেই অর্থ যথোপযুক্ত ব্যয় হচ্ছে না। ফলে পরিবার পরিকল্পনা সেবাকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের বাজেটে যা ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের তুলনায় আগামী বছরের জন্য ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কেবলমাত্র বাজেট বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। বরং বরাদ্দকৃত বাজেট পরিকল্পনা মাফিক ব্যয় করা এবং মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরো কার্যকরী করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। বরাদ্দকৃত বাজেটে কার্যকরীভাবে ব্যয় করার জন্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের যে কাঠামো আছে তাকে সক্রিয় করা দরকার। একইসঙ্গে সরকারি কর্মসূচিতে বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ, প্রচার ও পরিষেবা সম্প্রসারণ এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার মান উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি সেবা নীতিমালা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব জোরদার করা প্রয়োজন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপি করোনা মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। সাধারণত এধরণের অবস্থার পরপরই গর্ভধারণকারী, বাচ্চা প্রসব এবং অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ ও অনিরাপদ গর্ভপাতের সংখ্যা তুলনামূলক বৃদ্ধি পায়। তাই, বিশ্ব মহামারীর সময়ে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের প্রতি আলোকপাত করেই কাজ করতে হবে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের সাথে বৈশ্বিক ও দেশীয় বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মাতৃ ও কিশোরী স্বাস্থ্য গর্ভকালীণ, প্রসবকালীণ ও প্রসবোত্তর সময়ের বিভিন্ন ঝুঁকি ও প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা জরুরী।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অপ্রত্যাশিত এই মহামারীর কারণে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বর্তমানে অপ্রতুল তথ্য সেবা ও অপর্যাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্যসেবার কারণে গর্ভধারণ ও মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়াও চাহিদা মাফিক গর্ভনিরোধক সরবরাহে ঘাটতির ক্ষেত্রে আগাম অনুমানের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে পারে বলেও অনেকেই আশংকা করছেন। তাই এই মহামারীর সময়ে পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃস্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের দেখতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র হ্রাস, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জেন্ডার সমতা, পাঁচ বছরের নিচে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানো ও গড় আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। প্রতি একজন নারীর গড় সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ১৯৯৪ সালে সংখ্যা ছিল ৩ দশমিক ৪। যা ২০১৪ সালে এসে দাড়িয়েছে ২ দশমিক ৩ জনে। যা নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। যার দাবিদার সরকারের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেরিতে গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদানের বিরতি, অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ এবং কাঙ্খিত পরিবার গঠনে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম প্রতি তিন জনে একজন নারীর মাতৃমৃত্যুর প্রতিরোধে সহায়তা করে। পরিবার পরিকল্পনা একজন ব্যক্তিকে বা দম্পতিকে সন্তান জন্মদানের সময় ও সন্তান সংখ্যা নির্দিষ্টকরণে সহায়তা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই অগগ্রতি সত্ত্বেও আইসিপিডি কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। কেননা অনেকাংশে আমরা লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে আছি। বিশেষত: নারী প্রতি গড় সন্তান জন্মের হার মাতৃমৃত্যু হ্রাসকরণের অন্যতম ভূমিকা পালন করে, কিন্তু ২০১১ সাল থেকে এই হার ২ দশমিক ৩ জনে স্থির হয়ে রয়েছে। এরপর দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের হার নিম্ন (৮ শতাংশ)। অপূরণীয় চাহিদার হার অনেক বেশি (১২শতাংশ)। বিবাহিত অল্প বয়সী নারীদের মধ্যে অপূরণীয় চাহিদার হার সর্বোচ্চ, সার্বিক অপূরণীয় চাহিদার ১২ শতাংশের মধ্যে। সার্বিকভাবে পদ্ধতি ব্যবহার চালিয়ে না যাওয়ার হার (৩০ শতাংশ) এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যহারের হার কম (সিপিআর)। নারী ও পুরুষের মাঝে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হারের পার্থক্য বিশাল। নারী ও পুরুষের মাঝে আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের অনুপাত ১ : ৬ ( পুরুষ:৭.৬% এবং নারী: ৪৬.৫%)। বিবাহিত অল্পবয়সী (১৫-১৯ বছর) মেয়েদের মধ্যে আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ৫১শতাংশ। যা অনেক কম (বিডিএইচএস, ২০১৪)। এছাড়া অভিবাসীরা, বিশেষতঃ শহর এলাকার নারীরা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অধিদপ্তরের গড় ব্যয়ের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৯টি অপরেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে জানুয়ারী ২০১৭ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। তার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৭টি ওপি’র প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ৪ হাজার ৯২৩ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। যা সেক্টর কর্মসূচির মোট প্রক্কলিত ব্যয়ের ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৭টি ওপি’র জুলাই ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত গড় ব্যয় ছিলো ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং একই সময়ে জাতীয় ব্যয়ের গড় ছিলো ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, বৈশ্বিক কর্মসূচীর সাথে সঙ্গতি রেখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় শহর ও গ্রামের অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল লোকজনদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা সেবাপ্রদান ও পদ্ধতি ব্যবহার এবং গ্রহীতার নিজস্ব পছন্দের অগ্রাধিকারের গুরুত্ব আরোপ এবং দীর্ঘ মেয়াদি স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি করতে বিভিন্নধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এছাড়াও তরুণদের প্রয়োজন বিশেষত নব দম্পতিদের প্রয়োজন মেটানো, আঞ্চলিক বৈসাম্যতা হ্রাসকরণ, বাল্য বিয়ে ও অল্প বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান ঠেকানো, পরিবার পরিকল্পনা সেবায় পুরুষদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওদের সাথে কাজ করার প্রতিশ্র“তি প্রদান করেছে।
এছাড়া গত নভেম্বরে কেনিয়াতে অনুষ্ঠিত হয় আইসিপিডি+২৫ এবং বাংলাদেশ সরকার আইসিপিডি’র সম্মেলনের বিষয়বস্তুর সাথে সম্পূর্ণ একাত্বতা প্রকাশ করে সার্বজনিন স্বাস্থ্য পরিধির প্রেক্ষাপটের কার্যক্রমে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবাকে অতি প্রয়োজনীয় সেবা হিসেবে অন্তর্ভূক্তকরণ, অর্থায়নের গতিশীলতা আনয়ণ, জনসংখ্যার বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়ন, নারী ও মেয়েদের প্রতি জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা ও ক্ষতিকর আচরণের অনুশীলন বন্ধ, মানবিক সংকট ও দুর্যোগকালীণ প্রেক্ষাপটে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ বিষযগুলি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে। আগামীতে সেই রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ১৩ জুন ২০২০ ইং
Be the first to comment on "বাজেট বরাদ্দ যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনার মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান"