সর্বশেষ

সুধীর দে : উদারনৈতিক কারিগর

অমিত রঞ্জন দে # সুধীর কুমার দে আমার বাবা। ১০ আগস্ট ২০২০ বাবার ত্রিশতম মৃত্যুবার্ষিকী। বাবার সঙ্গে আমাদের ভাই-বোনেদের সম্পর্কটা ছিল একটু অন্যরকম। ভয়ানক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ। সাতক্ষীরার তালা থানার গঙ্গারামপুর গ্রামের একজন স্বনামধন্য স্কুল শিক্ষক। শুধু শিক্ষকই-বা বলছি কেন? কি গুণ ছিল না তাঁর মধ্যে। চমৎকার রান্না করতেন। প্রতিবেশিদের যে কোনো বড়ো আয়োজনে রান্নার দায়িত্ব তাঁরই। কারো জমি মাপতে হবে? সুধীর বাবু। গ্রামে যাত্রাপালা হবে, কে নির্দেশনা দেবে? দাদা, কাকু, জেঠু শ্রেণীভেদে সম্বোধন করে আপনাকেই আমাদের যাত্রাপালায় নির্দেশনা দিতে হবে। নির্বাচন এসেছে, ভোট কাকে দেওয়া যায় আপনি বলে দেন। এরকম অজস্র বিষয়ে এলাকার মানুষের সাথে বিনিময় হতো। বলাচলে এসকল বিষয়ে এলাকার মানুষের একধরনের নির্ভরশীলতা ছিলো তাঁর প্রতি।

সুধীর দে সোনার চামচ মুখে জন্ম নিলেও ছ’মাসের মধ্যেই চামচটি ছিটকে পড়ে। তাঁর বয়স যখন ছ’মাস এবং মা শতদল বাসিনী দে’র কোলে একটু একটু করে বেড়ে উঠছেন সে সময় তাঁর পিতা বাদল চন্দ্র দে তাঁর অন্য ভাইদের সাথে বড়দল হাটে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ভাইদেরই ষড়যন্ত্রে তাঁকে চাক চাক করে কেটে বস্তাবন্দী অবস্থায় নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়া হয়। পিতৃহারা শিশু সুধীর দে’র জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। মায়ের উপর চলে অমানসিক নির্যাতন। বাড়িতে গচ্ছিত বালতি বালতি সোনা লুট হয়ে যায়, দখল হয়ে যায় অধিকাংশ সম্পত্তি। তবে সে অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও হাল ছাড়েন না মা শতদলবাসিনী দে। দৃঢ়চিত্তে ভিটে আঁকড়ে পড়ে থাকেন। তাঁর দৃঢ়তায় রক্ষা পায় কিছুটা সম্পত্তি।

কিন্তু শিশু সুধীরের আর মায়ের সাথে থাকা হয় না। কারণ যেকোনো মুহুর্তে তাঁকেও শেষ করে দিতে পারে পশুসম পিতার এই ভ্রাতৃবর্গ। বৈষয়িক সমস্যার রেশ ধরে তাকে বেশ কয়েকবার মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো বলেও জানা যায়। তাই তাঁকে রেখে আসা হয় পাশের গ্রাম নলতায় তাঁর মামীমা মনোরমা বসুর কাছে। মা শতদল বাসিনী দিনে দুইবার গিয়ে তাঁকে দুধ খাইয়ে আসতেন। এই মামাবাড়িতেই বয়সে কিছুটা বড় মামা অমূল্য (হারা বোস নামে পরিচিত) বসু এবং কাছাকাছি বয়সী আরেক মামা বলাই বসুর সাথে বেড়ে উঠতে থাকেন।

নলতা হিন্দুপ্রধান এলাকা এবং তাদের সেখানে ভীষণ দাপট ছিলো। বাবার দুরসম্পর্কের এক মামাতো দাদা ছিলেন। যার নাম অশ্বিনী বসু। তিনি অত্র এলাকায় বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। যার কারণে শত্রুরা তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছিলো। বাবা সেখানে থেকেই পড়াশুনা চালাতে থাকেন এবং কৃতিত্বের সাথেই ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাশ করেন। কিন্তু পড়াশুনা আর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। মেট্রিক পাশ করার কিছুদিন পর খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সনাতনকাঠি গ্রামের রমাপতি ঘোষের কন্যা আশালতা দে (ঘোষ)র সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁরা ছয় সন্তানের জনক-জননী। অমিয় রঞ্জন দে, নীহার রঞ্জন দে, নিখিল রঞ্জন দে, কৃষ্ণারাণী দে (বসু), নিশীথ রঞ্জন দে এবং অমিত রঞ্জন দে।

পেশাগত জীবনে বড় অস্থির ছিলেন তিনি। কোথাও খুব বেশিদিন টানা চাকরি করেন নি। বিয়ের পর কিছুদিনের জন্য কোলকাতায় চলে যান। সেখানে জ্যাঠতুতো মেজো সম্বন্ধির সহযোগিতায় একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিন্তু বার বার বদলী এবং অনেক দূরে হওয়ায় তিনি সে চাকরী ছেড়ে দেন এবং চলে আসেন বাড়িতে। যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশার সাথে। পাইকগাছা উপজেলার মামুদকাঠি (সরকারী) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এই চাকরিটিও পান শ্বশুর রমাপতি ঘোষের তত্ত্বাবধানে। রমাপতি ঘোষ ছিলেন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সম্ভবত ১৯৫৯-১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। স্কুলটির তখন নিজস্ব কোনো ঘর ছিলো না। মামুদকাঠিতে খুব নামকরা একটি হরি মন্দির আছে। যেখানে প্রতিবছর খুব জাকজমকসহকারে নামযজ্ঞ হয়। হরিসভার বিভিন্ন কক্ষে তখন এই স্কুলের ক্লাস নেয়া হতো । বাবা সেখানেই শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন।

এরপর কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরে কেরানির চাকরির পাশাপাশি নিচের ক্লাসের দিকে পড়াতেন। সেখানেও খুব বেশি দিন থাকেন নি। ৬৫-৬৬ সালের দিকে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন। এরপর আবার ১৯৬৮ সালে খলিলনগর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সংস্কৃত শিক্ষক হিসেবে সেখানে যোগদান করেন। যদিও তিনি পড়াতেন প্রায় সকল বিষয়ে। আনুমানিক ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত খলিলনগর স্কুলে ছিলেন। এরমধ্যেই বেশ কয়েকবার চাকরি ছেড়ে দেন। আর প্রত্যেকবারই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের বাড়িতে এসে তাঁকে ধরে নিয়ে যেতেন। কারণ বাবার ইংরেজি, বাংলা, অংকে অসামান্য দখল ছিলো।

বাবার হাতের লেখা ছিলো মুক্তোর মতো। যেন জ্বলজ্বল করতো। আমাদের শৈশবে তালের পাতা কেটে পানিতে কয়েকদিন ভিজিয়ে রাখা হতো। তারপর সেটা রৌদ্রে শুকানোর পর তাতে লেখা হতো। বাঁশের কঞ্চি কেটে তাদিয়ে কলম বানিয়ে কাঠ-কয়লা গুড়ো করে পানিতে গুলে বাবা আমাদের তাঁর কোলে বসিয়ে হাত ধরে অ, আ, ক, খ লেখা শেখাতেন। বাবার লেখার মোটামুটি কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন আমাদের চতুর্থ ভ্রাতা ডা. নিশিথ রঞ্জন দে। মেজদা নীহার রঞ্জন দে এবং আমার লেখা মোটামুটি ভালো হলেও বাবার লেখার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারি নি।

শুরুতেই বলেছি, আমার বাবা নানামূখি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। আমি তখন সবেমাত্র তৃতীয় শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে উঠেছি। হঠাৎ একদিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম আব্দুল আলীর নিকট থেকে জানা গেল বাবা আবার স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। জি এম আব্দুল আলী খলিলনগর ইউনিয়নে ৩৫ বছর চেয়ারমানি করেছেন এবং বাবার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। শুধু তাই নয়, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের আগেরদিন আমার বাবা এবং খলিলনগরের রামপ্রসাদ (ডাক্তারের) দেবনাথ-এর দায়িত্ব ছিলো গোটা ইউনিয়নের ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা সমূহে একবার ঘুরে আসা। ভোটারদের অন্তত একবার বলে আসা যেন তারা জি এম আব্দুল আলীকেই আগামীকাল ভোটটা দেয়। সুতরাং তাঁর তথ্য যে নির্ভুল তা বুঝতে আমাদের বাকি রইলো না।

এর কিছুদিন পর বাবা বাড়ি ছেড়ে কোথায় যেন চলে গেলেন। আমরা কেউ কিছু জানি না। পরে জানা গেল উনি বাবুল অপেরায় প্রম্পট মাস্টার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বাবুল অপেরা তখন দেশের অন্যতম সেরা যাত্রাদল। বাংলার অন্যতম সেরা নায়ক মুকুন্দ ঘোষ, তার ভাই অশোক ঘোষ, বোন-ভগ্নিপতিসহ দেশের সেরাসেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তখন বাবুল অপেরায় অভিনয় করেন। এ সময়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করা প্রয়োজন। বাবুল অপেরা তখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটে বেড়াচ্ছে। চট্টগ্রামের মিরেরসরাইতে যাত্রাদল। সেদিন নবাব শায়েস্তা খাঁ যাত্রাপালা। লোকে লোকারন্য। প্যান্ডেলে তীল ধারণের জায়গা ন্ইে। মহানায়ক মুকুন্দ ঘোষ মঞ্চে আরোহন করেছেন। হঠাৎ দর্শক সারি থেকে চিৎকার শোনা গেল, ‘আমরা কোন অভিনেতার অভিনয় শুনবো না। আমরা প্রম্পট মাস্টারের প্রম্পট শুনবো।’ সেদিন বাবাকে গোটা নবাব ‘শায়েস্তা খাঁ’ যাত্রাপালা একা একা মঞ্চে দাঁড়িয়ে পাঠ করে নামতে হয়েছিলো। মজার বিষয় হলো দর্শক সারি নিশ্চুপ, কোথাও পিন পতনের কোনো শব্দ ছিলো না। এত চমৎকার পাঠ করতেন তিনি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন যাত্রাদলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

চমৎকার গল্প বলতে পারতেন তিনি। বাবার কোলের মধ্যে গুটিশুটি শুয়ে গল্প শুনতাম। বিশেষকরে বর্ষাকালে বাবা যখন বাইরে বের হতে পারতেন না তখন। ভীষণ মেজাজী এই মানুষটা বর্ষায় কেমন জানি ভিজে যেতেন। কাছে টেনে নিতেন, গল্প শোনাতেন। কুড়ের গল্প, আলসের গল্প, বৃষ্টি ও মাগুর মাছের গল্প, রাজারাণীর গল্প, হাতি ও বেড়ে পোকার গল্প, বাঘের বাসায় ঘোগের গল্প, বিধাব মা ও তার ছেলের গল্প, ছ্যাত ছ্যাত তেরখান খাবার সময় তিনখান, আরো কতশত গল্প। কি অসাধারণ ঢং, কণ্ঠবৈচিত্র্য আর শব্দব্যঞ্জনায় তিনি গল্পগুলো বলতেন। আমি বাবার কোলের মধ্যে শুয়ে শুয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম। তখন আমার চোখের সামনে একেকটা দৃশ্যকল্প তৈরি হতো। বাবার কাছে এরকম গল্প শুনতে শুনতে কখনো কখনো ঘুমিয়ে পড়তাম। কখনো আরো নতুন নতুন গল্প শোনার জন্য ব্যগ্র-ব্যাকুল হয়ে উঠতাম।

উদার মানবিকতাবোধে আবিষ্ট একজন মানুষ ছিলেন সুধীর কুমার দে। কথিত আছে এই পরিবারটি একসময় প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক ছিলো। পূর্বপুরুষরা জমিদারের গাঁতিদার(সামন্ত রাজা) ছিলেন। তাঁর পিতা বাদল দের সময় পর্যন্ত তা মোটামুটি বহাল ছিলো। সুধীর দের জমিদারী না থাকলেও মেজাজ, চালচলনে তার ঘাটতি ছিলো না। তাঁর মেজাজের কথা জানত সবাই এবং ভয়ে চলত। তবে এত রাগী মানুষটা কখনো কারোর সেবায় পিছপা হতেন না। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা বলা যেতে পারে। আমাদের গ্রামের একপাশে কিছু কাওরা সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। এদের পেশা শূকর পোষা। শূকরের পাল নিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে ঘুরে চরায়। খানিকটা যাযাবরের জীবন। অধিকাংশেরই নুন আনতে পানতা ফুরায়। এদেরও মাঝেমধ্যেই বাবার কাছে ছুটে আসতে দেখেছি। আব্দার করতে শুনেছি, ‘বাবু একটু মাংস খেতে ইচ্ছা করছে।’ তিনি কখনো তাদেরকে নিরাশ করেন নি। নিজের কষ্ট হলেও তাদের সেসব ইচ্ছে হাসিমুখে পূরণ করতেন।

আমাদের বাড়ির উঠোনটা বেশ বড়ো। মাঝখানে প্রকাণ্ড একটা গোপালভোগের আমগাছ, তার দক্ষিণে পুকুর। মানুষগুলো তাদের আবদার সেরে বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যেত সেই আমগাছের ডালে ঝুলছে গলাকাটা একটা নিরীহ খাসি ছাগল। এরপর তা চুলোর আগুনে নিজেই রান্না করছেন। উঠোনে কলাপাতা পেতে কাওরা সম্প্রদায়ের ওই যাযাবর প্রকৃতির মানুষগুলোকে বসিয়ে পরম মমতায় তিনি খাওয়াতেন। শুধু তাই নয়, গ্রামের কোনো ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করতে চাইলে তিনি তাদের নিজের মত করে অর্থ সহায়তা করে হোক আর নিজে পড়িয়ে হোক সাহায্য করতেন। গ্রামের কারো কোনো সমস্যা হলে জাতি-ধর্ম-বর্ণের তোয়াক্কা না করে সবার আগে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন।

বাবাকে হারিয়েছি আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে। তখন আমি খুলনা বিএল কলেজে অনার্স প্রথমবর্ষের ছাত্র। সেদিনই খুলনার দৌলতপুর থেকে বাড়ি গিয়েছি। বাড়ি গিয়েই বেরিয়ে পড়ি গ্রামের অন্যদের সাথে দেখা করার জন্য। বাবাও সেদিন বিকেলে একটা লাঠি হাতে দীর্ঘদিন পর গোটা গ্রামটা ঘুরে এসেছিলেন। কারণ মাঝখানে মাইল্ড স্টোকে কিছুটা প্যারালাইজড হয়ে পড়েছিলেন। রাতে একসাথে খেতে বসেছি। বাড়িতে সেদিন বেশ বড় বড় ট্যাংরা মাছ রান্না হয়েছে। আমি অনেকদিন পর বাড়ি গিয়েছি বলে বাবা আমার বড় বৌদিকে আরো একটা মাছ দিতে বললেন। আমি খেলাম। বাবা একপলকে আমার দিকে চেয়ে রইলেন। তখনও কিছু বুঝিনি। তারপর রাতে ঘুমানোর জন্য মেজদার মুদিখানার দোকানে চলে গেলাম।

রাত প্রায় তিনটা। মেঝদার দোকানের বাইরে সুপারির চটা দিয়ে একটা মাচা করা ছিলো। তার উপরে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার মেজকাকা (বাবার খুড়তুতো ভাই) গিয়ে ডাকছেন। অমিত ওঠ তো, বাড়ি চল। আমি উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম কেন? কাকা বললেন, তোর বাবা কেমন করছে। আমি তখনই বুঝে গেলাম বাবা নেই। তৎক্ষণাৎ বিছানাগুলো দোকানের ভেতরে রেখে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। কাকার হাতে একটা হারিকেন ছিলো। সেটা নিয়ে কাকা হাটছেন। আমি সে হারিকেনের অপেক্ষা না করে অন্ধকারের তীব্রতা ভেদ করে এগিয়ে চললাম। বাড়ি পৌঁছে দেখি আমার অনুমান সত্য। সবাই কান্নাকাটি করছে। আমি কাঁদিনি। বাড়ির বারান্দায় গিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম।

মনের ভেতরে রাজ্যির চিন্তা ভিড় করছে। কিন্তু কোনটাই স্থায়ী হচ্ছে না। এরমধ্যে কখন যে রাত্রী শেষ হয়ে গেছে বুঝতে পারি নি। বাবার লাশ ঘোষনগর শ্মশানঘাটে নিয়ে দাহ করে এলাম। চারভাই চার কোনায় ধরে ঘাড়ে তুললাম। বাড়ি থেকে একেবারে শ্মশানঘাট পর্যন্ত বাবার লাশ আমার কাঁধে। আমাদের পেছনে গ্রামের অসংখ্য মানুষ। আমি জানি না, সেদিন ঘোষনগরের খেয়াঘাটে অবস্থিত শ্মশানে দাহ করার মধ্যদিয়ে সেই ছাই ভষ্মের সাথে তাঁর স্মৃতিও সবার কাছে ভষ্ম হয়ে গেছে কিনা। তবে আমার হৃদয়ে তাঁর স্মৃতি অমলিন হয়ে আছে। সে কখনো কাঁদায়, কখনো হাসায়, কখনো গর্বে বুকটা চওড়া করে দেয়। এখনো কোনো মঞ্চনাটক শেষে মঞ্চ থেকে নামার পর কেউ যদি বলে অমিত দারুণ হয়েছে, তুমি এতো স্বত:স্ফুত কাঁদো কেমন করে। আমি দেখি বাবা আমার সামনে। দুর্গা পুঁজার সময় হরিসভার মাঠে যাত্রাপালায় প্রম্ট মাস্টার হিসেবে অবলীলায় কখনো হো হো করে হাসছেন, আবার ভেউ ভেউ করে কাঁদছেন।

বাবা তোমাকে ছাড়া ত্রিশ বছর। কখনো লেখার সময় হয়নি। আজ এই বন্দী সময়ে কোন এক অব্যক্ত বেদনা হৃদয় মাঝে গুমরে মরছে, সজোরে ঝাঁকুনি দিচ্ছে। তাই বিস্মৃতপ্রায় স্মৃতিগুলোর মালা গাঁথার চেষ্টা করলাম। জানি তোমাকে তুলে ধরা আমার পক্ষে প্রায় অসম্বব, তবুও চেষ্টা করলাম। বাবা তুমি কোথায় কেমন আছো জানি না। যেখানেই থাকো, ভালো থাকো। আমার বেদনাসিক্ত হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি গ্রহণ করো।
###

পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম ১০ আগষ্ট ২০২০ ইং

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "সুধীর দে : উদারনৈতিক কারিগর"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*