মিঠুন কুমার দত্ত
জাতীয় সংসদের দশম (বিশেষ) অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবন জুড়ে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা আয়োজন চলছে। নতুন সাজে সাজানো চলছে পুরো সংসদ ভবন এলাকা। বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দিবেন তাই বাড়তি প্রস্ততিও নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় অধিবেশন শুরু হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ-২০২০) উপলক্ষে এই অধিবেশনকে বিশেষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অধিবেশনের প্রথম দিনে শোক প্রস্তাব ও অধ্যাদেশ উত্থাপন করা হবে। পরদিন ৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ টায় বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হবে। ওইদিন অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য ও কর্মময় রাজনৈতিক জীবন নিয়ে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার পর তা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সাধারণ প্রস্তাব আনা হবে। ওই প্রস্তাবের ওপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে তা পাস হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে প্রস্ততি শেষ পর্যায়ে সংসদ সদস্য, সাংবাদিকসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা চলছে। সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টার ও মেডিকেল সেন্টার এই পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। করোনা নেগেটিভ ব্যক্তিরাই বিশেষ অধিবেশনে প্রবেশ করতে পারবেন। করোনাকালীন বিগত তিনটি অধিবেশনের মতো আগামী অধিবেশনেও সংসদ সদস্যরা রোস্টারভিত্তিতে অংশ নিবেন। তবে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার দিন ৯ নভেম্বর করোনা নেগেটিভ সকল সংসদ সদস্য অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন। এদিন প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিদেশী কুটনীতিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও সমাজের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা সংসদ গ্যালারিতে উপস্থিত থাকবেন।
সংসদ ভবন ঘুরে দেখাগেছে, বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে স্পিকার যেখানে বসেন, তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি টানানো হয়েছে। সংসদ ভবনের লেকে ভাসানো হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য দৃষ্টিনন্দন দু’টি নৌকা। দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রতীক এই নৌকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। সংসদ লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ বাণী নিয়ে আলো-ছায়ার দৃষ্টিনন্দন কোলাজ করা হয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় প্যা-েল করে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আলোকচিত্র ও প্রামাণ্য দলিলে পাকিস্তানের গণপরিষদ, স্বাধীন দেশে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদে বঙ্গবন্ধুর কাজগুলো ফোকাস করা হবে। একটি রাষ্ট্রের জন্ম, সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু যা কিছু করেছেন তা তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বক্তব্যও বাজানো হবে। এছাড়া সংসদ ভবনের ভিতরে-বাইরে নানা ধরণের বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে বিশেষ অধিবেশন বসবে। অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের উপর স্মারক বক্তৃতা করবেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর উপর সাধারণ আলোচনায় হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশী অতিথিরা না থাকলেও অধিবেশনকে স্মরণীয় করে রাখতে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বলেন, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অধিবেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে কোন শৈথিলতা দেখানো হবে না। অধিবেশনের আলোচনা, সাজসজ্জা ও প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর জীবন,-কর্ম, দর্শন, রাজনৈতিক জীবন এবং সর্বপরি মহান এই নেতার বর্ণাঢ্য জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হবে। চারদিনের বিশেষ আলোচনা শেষে পরে অধিবেশনের সাধারণ কার্যক্রম চলবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ২২ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন (সপ্তম অধিবেশন) আহ্বান করা হলেও দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় তা স্থগিত করেন রাষ্ট্রপতি। করনো পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ নতুন করে অধিবেশন ডাকা হয়েছে। আগামী ৯ থেকে ১২ নভেম্বর বিশেষ কার্যক্রম চললেও বাকী দিনগুলো সাধারণ কার্যক্রম চলবে। আগামী ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত অধিবেশন চলার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংসদের বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে চলছে নানা আয়োজন
শেয়ার করতে ক্লিক করুন
Be the first to comment on "সংসদের বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে চলছে নানা আয়োজন"