ঢাকা : পানি সমস্যার সমাধানে পানির যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবনের বিকল্প নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন পানি বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও পানি নিয়ে কর্মরত সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আজ রবিবার অনলাইন সেমিনারে অংশ নিয়ে তারা বলেন, ‘মানুষের জন্য পানি, প্রকৃতির জন্য পানি এবং উন্নয়নের জন্য পানি’- এই সত্যকে উপলব্দি করতে হবে। পানির গুরুত্ব অনুধাবন করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
বিশ্ব পানি দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘পানির গুরুত্ব অনুধাবন’ (ভ্যালুয়িং ওয়াটার) এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ রবিবার এই সেমিনারের আয়োজন করে ফ্রেশ ওয়াটার একশন নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়া- বাংলাদেশ, স্যানিটেশন এণ্ড ওয়াটার এলায়েন্স, ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক, ফিকেল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট নেটওয়ার্ক, মিন্সট্রিউয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার এসোসিয়েশন এবং ওয়াটারএইড। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাতের সভাপতিত্বে সেমিনারে পানি ব্যবহারের বৈশি^ক ও বাংলাদেশে চিত্র তুলে ধরেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. তানভীর আহমেদ।
আলোচনায় অংশ নেন বুয়েটের শিক্ষক প্রফেসর ড. মু. মুজিবুর রহমান, খুলনা বিশ^বিদ্যালযের শিক্ষক প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান, রিভাইন পিপলস বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ রোকন, ওয়াটারএইডের দেশীয় পরিচালক হাসিন জাহান, সাংবাদিক বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, ফ্রেশওয়াটার একশন নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়া- বাংলাদেশের কনভেনর যোসেফ হালদার প্রমূখ।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ড. আইনুন নিশাত বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, পানি মানুষের অধিকার হলেও, বাংলাদেশে বিষয়টি অধিকার হিসেবে পরিগণিত হয় না। পানি নিয়ে আমাদের দেশে অনেক কথা হয়, পরিকল্পনা হয়; কিন্তু পানির উপর যথাযথ গুরুত্ব প্রদানের ব্যাপারটি আজও অবহেলিত।
প্রফেসর ড. মু. মুজিবুর রহমান বলেন, দূষিত পানি পরিষ্কার পানিতে মিশে পানি সম্পদকে দূষিত করার পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সংকটাপন্ন করে তুলছে। এই দূষণ সবার আগে রোধ করতে হবে। পানিকে নিরাপদ রাখা ও তার ন্যায্য ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, পানির গুণগত মান ও ন্যায্য ব্যবহারে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলীয় এলাকার মানুষ সচেতন নয়। চাষাবাদে পানির ব্যবহার যথেচ্ছভাবে করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে লোকালয়ে নোনা পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের মাধমে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য, জীবন ও জীবিকা। বৃষ্টির পানি ব্যবহারেও যথাযথ গুরুত্ব নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূর্গস্থ পানির স্তর দিন দিন নীচে নেমে যাচ্ছে। তাই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বরেন্দ্র এলাকা উপযোগী কিছু সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে হাসিন জাহান বলেন, ধনী লোকেরা গরীবদের চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার করেন। কেথাও ১৪ লিটার পানি ২০ টাকায় আবার কোথাও এক লিটার পানি ২০ টাকায় পাওয়া যায়। একেক স্থানে পানির দাম একেক রকম। তিনি পানি সমমূল্য নির্ধারণের দাবি জানান।
শেখ রোকন বলেন, ভারতবর্ষে এক সময় ফুলের মূল্য ছিল না। অর্থাৎ ফুল কিনতে কোনো টাকা লাগত না। পানির মূল্য ছিল না। এখন পানি কিনে খেতে হচ্ছে। পানির মূল্য দেওয়ার আগে নদীসহ পানির উৎসগুলোর মূল্য দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিক বুদ্ধজ্যোতি চাকমা বলেন, পাবর্ত্য জেলায় পানির যে উৎসগুলো যেমন ছড়া, ঝর্ণাগুলো শুকিয়ে গেছে। জনসংখ্যার চাপ এবং তা সামাল দিতে পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি বিরোধী উন্নয়ন করতে গিয়ে পানিকে গুরুত্বের মধ্যে রাখা হয়নি। ফলে সেখানে পানির সংকট তৈরি হয়েছে।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ২১ মার্চ ২০২১ ইং
Be the first to comment on "পানি সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন পানির যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন : বিশষেজ্ঞরা"