সর্বশেষ

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস : করোনায় ব্যাহত স্বাস্থ্য সেবা

সাকিলা পারভীন # বৈশ্বিক মহামারীকালে দ্বিতীয়বারের মতো পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। করোনা মহামারীর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক স্থবিরতা অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে মানুষের জীবন-জীবিকা সংক্রান্ত প্রায় সকল ক্ষেত্র। যেখানে সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে তালিকার উপরের দিকেই। করোনা আতংকে বিভিন্ন জটিল রোগসহ অনেক অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত যেমন হতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর পাশাপাশি জন্মের ঘটনাও রয়েছে। এসবকিছু নিয়ে পারিবারিক-সামাজিক কাঠামো অনেকাংশেই স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে।

‘পরিবার এবং নতুন প্রযুক্তি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে আজ ১৫ মে বৈশ্বিক মহামারীকালে দ্বিতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। করোনাকালে পরিবারগুলোর প্রয়োজন এবং সামর্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েই নির্ধারিত হয়েছে এবারের মূল বক্তব্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত এক বছরের অভিজ্ঞতা আর আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে এসব বিষয়ে সময়োপযোগী কর্ম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমেই এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এতে আমাদের হাজার বছরের নানান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা পারিবারিক কাঠামো রক্ষা হবে।

পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী মহিউল ইসলাম এবারের পরিবার দিবসের মূল বক্তব্যকে অত্যন্ত সময়োপযোগী উল্লেখ করে বলেন, পরিবার হচ্ছে আমাদের সমাজ কাঠামোর মূল ভিত্তি। সেই পরিবার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই ভিন্নভাবে ভাবার সময় এসেছে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও গতানুগতিকতার বাইরে যেতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে প্রত্যেক মানুষের কাছে যথাযথ সেবা পৌছাতে সরকারি বেরসকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। পারিবারিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিহেবিয়ার চেঞ্জ কমিউনিকেশন বিষয়ে কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।

মেরী স্টোপস্ বাংলাদেশ-এর এ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মনজুন নাহার বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশেও পালিত হয়ে আসছে। বৈশ্বিক মহামারীকালে এবার দ্বিতীয়বারের মতো আমরাও পালন করছি। এসময়ে পরিবারগুলোকে নানান সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে মনজুন নাহার বলেন, আমাদের দেশের যে কোন দুর্যোগেই যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবাকে কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। গুরুত্বহীন থাকে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবার মতো জরুরি বিষয়ও। একটি পরিবারকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য এই বিষয়গুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবেই বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান এই উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী।

ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০৪ জন অতিরিক্ত শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে প্রায় ৯ হাজার ২শত ৩৬ জন। আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে, করোনাকালে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে এবছরে প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার অতিরিক্ত শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আমাদের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এমআইএস প্রতিবেদনেও দেখা যায়, পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। এর পিছনে প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- করোনাকালে লকডাউন, দোকান-পাঠ বন্ধ থাকা, সেবা-কর্মী বা গ্রহীতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিতে কিংবা সেবাকেন্দ্রে এসে গ্রহন করতে ব্যর্থ হওয়া, করোনাকালে আর্থিক সংকট ইত্যাদি।

এবিষয়ে এএফপি-মিডিয়া এ্যডভোকেসী প্রোগ্রামের টিম লিডার পুলক রাহা বলেন, বৈশ্বিক মহামারীকালে পরিবার দিবসকে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয় জাতিসংঘের ৫৯তম অধিবেশনেও। এই অধিবেশন থেকে সামাজিকভাবে টেকসই উন্নয়নের জন্য সামাজিক বিকাশ এবং সকলের কল্যাণে প্রযুক্তির ভূমিকা বিবেচনায় নিয়েই এবারের পরিবার দিবস পালনের মূল বক্তব্য নির্ধারণ করা হয়। তিনি বলেন, কোভিডকালে নিরাপদ প্রসব, প্রয়োজনীয় পরিবার-পরিকল্পনা সেবা সমগ্র্রী প্রাপ্তি, এএনসি/পিএনসি সেবা যথা সময়ে পাওয়াই হচ্ছে পরিবারগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও রয়েছে বাল্য বিয়ের প্রবনতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা। এসব সমস্যা মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অ্যাডভোকেট সুমিতা বাগচী পারিবারিক সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে পরিবার দিবসের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, সেই আপাত: দৃষ্টিতে করোনাকালে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে মানুষ অতীতে থেকে পরিবারের সাথে একত্রে বেশি সময় কাটানোর বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে, এসময়ে পরিবারের মধ্যে অস্থিরতা, মানসিক চাপ, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতাসহ নানান কারণে পারিবারিক নির্যাতনের হারও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনাকাঙ্খিত শিশু জন্মের কারণেও পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি হতে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসে এই সমস্যা সমাধানেও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতি জোর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
###

পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ১৫ মে ২০২১ ইং

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস : করোনায় ব্যাহত স্বাস্থ্য সেবা"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*