ঢাকা : করোনাকালে সেবা নিশ্চিত করতে পরিবার পরিকল্পনা খাতে বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি মনিটরিং জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা করোনাকালে নিরাপদ গর্ভধারণ ও প্রসব এবং মাতৃ ও নবজাতকের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
আজ শনিবার দুপুরে ‘করোনাকালে নিরাপদ মাতৃত্ব’ শীর্ষক বিশেষ সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এই আহ্বান জানান। পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম ও টিম অ্যাসোসিয়েট আয়োজিত সংলাপ সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আলোচনায় অংশ নেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের (ডিজিএফপি) পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শরীফ, আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. শেহরিন এফ. সিদ্দিকা, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি)’র পরিচালক (প্রশাসন) ডা, সনজীব আহমেদ, মেরি স্টোপস-বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি ও কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান মনজুন নাহার, পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম সম্পাদক সাকিলা পারভীন, টিম অ্যাসোসিয়েট প্রতিনিধি তানজিনা পৃথা, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, এফপিএবি’র অরুন কুমার শীল, সাংবাদিক আব্দুল আজিজ ও রিয়াদ হোসেন। মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মো. শরফুল আলম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ডিজিএফপি পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শরীফ পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম মনিটারিং ও সুপারভিশন জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের যে সীমিত শক্তি ও মতা আছে, তা নিয়েও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে আরো ভালো কিছু করা সম্ভব। অনেক সময় বাজেট থাকলেও মাঠ পর্যায়ে চাহিদা না পাওয়ায় বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয় না। যে কারণে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের অপারেশন প্লাণ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই আন্তরিক। আগামী বাজেটেও তার প্রতিফলন ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আগামীতে বাজেট বৃদ্ধি ও প্রশিণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন ডা. শেহরিন এফ. সিদ্দিকা। তিনি বলেন, সরকারী খাতেই প্রশিণ বেশী হয়ে থাকে। েেএত্র বেসরকারী খাতকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বেসরকারী খাতকে পৃষ্টপোষকতা প্রদান ও গ্রাম পর্যায়ে সেবা নিশ্চিত করতে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
পরিবার পরিকল্পনা খাতে অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে ডা. সনজীব আহমেদ বলেন, কেন জানি আমরা একটি জায়গায় থেকে আছি। এরপর করোনা পরিস্থিতি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নতুন প্রজš§কে প্রশিতি করে গড়ে তুলতে হবে। যুব সমাজকে সংগঠিত করতে পারলে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি মানবাধিকার নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতায় নেওয়ার সুপারিশ করেন মেরি স্টোপসের মনজুন নাহার। তিনি বলেন, নারীর প্রতি পরিবারের অবহেলার কারণে এই খাতে কাঙ্খিত অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। তাই কখন সন্তান নিবে, গর্ভধারণের পর কি খাবার খাবে, এ ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতা নারীদের দিতে হবে। তিনি স্থানীয় সরকারে পরিবার পরিকল্পনা বরাদ্দ বাড়ানো ও মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
মূল প্রবন্ধে মো. শরফুল আলম বলেন, করোনায় হাসপাতালে সীমিত চিকিৎসা সেবা, পরিবহন সংকট, সময়মতো সেবা না পাওয়ার কারনে বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার বেড়েছে। খিচুঁনি, ও প্রসব-পরর্বতী রক্তক্ষরণরে কারণে করোনায় মাতৃমৃত্যু বেড়েছে ২৫ েেথক ৩০ শতাংশ। এতথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচি ইপআিইয়ের। মহামারির আগে ৫০ ভাগ প্রসব হতো বাড়িতে, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ ভাগে। মহামারির আগে বাড়িতে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৩২ শতাংশের মতো। কিন্তু করোনাকালে ওজিএসবির ১৪টি শাখার তথ্য বলছে, শতকরা ৫৪ শতাংশ বাড়িতে মাতৃমৃত্যু বেড়েছে। সাধারণ সময়ে গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত চেকআপে থাকতেন, করোনা সংক্রমণের সময়ে অনেক মা-ই তা করাতে পারেননি।
মূল প্রবন্ধে করোনাকালে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ, দুর্যোগকালের জন্য বিকল্প কৌশল প্রণয়ন, টেলিমেডিসিন ও ডিজিটাল সেবা সহজলভ্য করা, জাতীয় পর্যায় থেকে পরিবার পর্যন্ত জেন্ডার বৈষম্য দূর করা, নারীর সমতা বৃদ্ধি, পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে মাতৃস্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমে বিশেষ গুরত্ব প্রদান, ভ্রাম্যমান সেবা জোরদার এবং প্রান্তিক মায়েদের জন্য মেডিক্যাল ক্যাম্প আয়োজনের সুপারিশ করা হয়।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ২৯ মে ২০২১ ইং
Be the first to comment on "`করোনাকালে নিরাপদ মাতৃত্ব’ শীর্ষক সংলাপে বাজেট বৃদ্ধি ও মনিটরিং জোরদারের সুপারিশ"