সর্বশেষ

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে : সংসদে সরকারী দল

ঢাকা : জাতীয় সংসদে সম্পুরক বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দল দাবি করেছে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপি করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বাংলাদেশ ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার’ বলে মন্তব্য করেছে।

রবিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এই আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও সেলিমা আহমাদ এবং বিএনপি’র মো. হারুনুর রশীদ ও ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, সারা পৃথিবীতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অবস্থা দেখুন। বাংলাদেশে যে বিপর্যয় হওয়ার কথা ছিল, আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে এটা আমরা মোকাবিলা করেছি। বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছে সারাবিশ্ব। তিনি আরো বলেন, করোনার প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপ উঁকি মারছে, ঠিক সেই অবস্থায় জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হয়েছে। তাই করোনা ও বাজেট বাস্তবায়নে সতর্ক থাকতে হবে। একটা ভালো বাজেট, এটা সম্ভাবনাময় বাজেট। এমন একটি জায়গা নেই যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণার পরেও অর্থ পাচার হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আলী আশরাফ বলেন, বাজেট দিলেই হবে না, তা বাস্তবায়নে সদিচ্ছা থাকতে হবে। সকল স্তরে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু মানুষের কর্মকাণ্ডে ঘৃণায় লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। অর্থ পাচার ও চোর হিসেবে যাদের নাম ওঠে, তা খুবই লজ্জার। অথচ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার দ্যার্থহীন কণ্ঠে বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। বাজেট বাস্তবায়নে প্রশাসনের সততা, দক্ষতা একাগ্রতা নিষ্ঠা না বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আয় কমেছে। যে কারণে মূল বাজেটের চেয়ে সম্পূরক বাজেট কমেছে। সরকার স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। দেশে ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থা বেশ প্রসারিত হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আরো পদক্ষেপ নিতে হবে। কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা খাত সম্প্রসারিত ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আরো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

বাজেটের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, চলতি অর্থবছরে সিপিডি-বিএনপির নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়ার কারণ অন্য। মেগা প্রজেক্টগুলো শেষ হয়ে এসেছে। তা দেখে তারা আবোল-তাবোল বকছে। তিনি আরো বলেন, করোনাকালে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার নগদ প্রণোদনা দিয়েছে। এতে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশে দক্ষ জনবল তৈরি করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় আরো বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বাংলাদেশ ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়া প্রথমে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। তারা ট্রায়াল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের ট্রায়ালের অনুমতি দেইনি। তাদের প্রস্তাব সেই সময় গ্রহণ করলে এখন আমাদের ভ্যাকসিনের সঙ্কট হতো না। তিনি আরো বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার। যে কারণে ভ্যাকসিন নিয়ে চীনের সাথে কথা হলেও ভ্যাকসিন পাব কি না তা অনিশ্চিত।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য চলতি অর্থ বছরে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা জনগণের কাজে লেগেছে বা কোভিড নিয়ন্ত্রণে ব্যয় হয়েছে, সরকার তা বলতে পারবে না। তাই স্বাস্থ্য বিভাগের সংস্কার জরুরী। তিনি আরো বলেন, আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল চাই। কিন্তু তার আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানুষ বাঁচলে সবকিছু আসবে। স্বচ্ছ তালিকা করে সামাজিক সুরক্ষা খাতের অর্থ দিতে হবে।

স্বাস্থ্যখাতের কঠোর সমালোচনা করে ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার টিকা আনতে ব্যর্থ হয়েছে। করোনাকালেও স্বাস্থ্য খাতে লুটপাট চলছে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি খবর তুলে ধারায় তাকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি রোজিনার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। তিনি আরো বলেন, বাজেটে প্রতিটা বিভাগে উন্নয়নে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরিব আরও গরিব হচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে।

বাজেট নিয়ে বিএনপি’র এমপিদের বক্তব্যের জবাবে তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় যদি বিএনপি সরকারে থাকলে কি হতো, তা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। হাওয়া ভবনের হাওয়ায় উড়ে যেত দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো একটি অকার্যকর অর্থনীতির ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। করোনাকালে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সরকার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
###

পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ০৬ জুন ২০২১ ইং

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে : সংসদে সরকারী দল"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*