সাকিলা পারভীন # কথা ছিল সূর্যের রশ্মি ও তাপ শুষে নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে সোলার প্যানেল। আর সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র জ্বলে উঠবে সড়কবাতি। আলোকিত হবে সমগ্র পৌর এলাকা। আর ওয়েস্ট বিন স্থাপনে শহর থাকবে পরিচ্ছন্ন। এজন্য জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের তিন কোটি টাকাও খরচ করে ১৫৫টি সোলার স্টিক লাইট ও ওয়েস্ট বিন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া পৌরসভার নাগরিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকার ও বিভিন্ন বিদেশি দাতা সংস্থা জয়বায়ু পরিবর্তনরোধ ও অভিযোজনের কাজে ব্যয় করার শর্তে পরিবেশ ও বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগকে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ বছরে গৃহীত ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য মঠবাড়ীয়া পৌর এলাকায় সোলার স্ট্রীট লাইট ও ওয়েস্ট বিন স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশ উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু স্ট্রিট লাইটগুলো অপরিকল্পিত ভাবে বসানো হয়েছে। আর পূর্বের বসানো সোলার প্যানেলগুলো বিভিন্ন জায়গায় অকার্যকর হয়ে আছে। সেগুলো মেরামাত করার কোনো উদ্যোগ না থাকায় অনেক এলাকায় অন্ধকার থাকছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে মঠবাড়িয়া পৌরসভায় কাঙ্খিত সুফল মিলছে না। এক্ষেত্রে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকরা। তবে যথাযথভাবে কাজ হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঠবাড়িয়া পৌরসভা ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সালেক পার্লামেন্ট নিউজকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে স্ট্রিট সোলার লাইট প্রকল্পে উপকৃত হবে পৌরবাসী। সোলার লাইটগুলো কার্বন নির্গমন হ্রাস করবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, সড়কপথে স্থানীয় লোকজনের চলাচল সুবিধা ছাড়াও পর্যাপ্ত আলোতে গাড়ি চালিয়ে চালকরাও খুশি। আগে কোন কোন সড়কে রাতে বেলা কিছু দেখা যেত না। এখন সোলার বাতি দেওয়ার কারণে পুরো সড়কজুড়ে ঝলমলে আলো রয়েছে। কিন্তু সব জয়গায় এক অবস্থা নয়। অনেক জায়গা এখনো অন্ধকার রয়েছে। আবার কিছু কিছু লাইটের আলো খুবই কম। সকল স্থানে এধরণের আলো নিশ্চিত করা গেলে চলাচলের সুবিধার পাশাপাশি চুরি ও ছিনতাই বন্ধ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
প্রধান মন্ত্রী ঘোষিত ‘গ্রাম হবে শহর’ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের সব সড়কপথেই পরিবেশবান্ধব সোলার বাতি স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এই স্লোগানে পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে কাজ চলছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বিবেচনায় নিয়ে সৌর বিদ্যুতের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফাণ্ডের প্রকল্প বাস্তবায়নে পৌরসভায় নাগরিক সুবিধা বেড়েছে বলে দাবি করেন মঠবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মো. রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস। তিনি পার্লামেন্ট নিউজকে বলেন, স্ট্রিট লাইট শহরকে আলোকিত রাখতে ও ওয়েস্ট বিনগুলো শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আগামীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এমতাবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফাণ্ডের প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মনিটারিং জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন নেটওয়ার্ক অন কাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসি’বি)’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক (রিসার্চ এন্ড এ্যাডভোকেসি) ড. মুহাম্মদ ফররুখ রহমান। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই প্রকল্পটি আরো সম্প্রসারণ করা দরকার ছিলো। প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে নাগরিক সেবা আরো বাড়তো।
উল্লেখ্য, মঠবাড়ীয়া পৌরসভা ১৯৯৩ খ্রিঃ স্থাপিত বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে পিরোজপুর জেলায় এটি অবস্থিত। মঠবাড়ীয়া পৌরসভাটি একটি নদী বেষ্টিত নিচু এলাকা। মঠবাড়ীয়া পৌর এলাকার পূর্ব পাশ দিয়ে বিশখালী, নদী পশ্চিম পাশ দিয়ে বলেশ্বর ও দক্ষিণে বঙ্গপসাগরে প্রবাহিত হয়েছে। প্রথমে এটি একটি কমিনিউটি সেন্টারে কার্যক্রম শুরু করে পরে এখন নিজস্ব ভবনে আছে।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং
Be the first to comment on "ট্রাস্ট ফাণ্ড প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না পৌরবাসী"