সর্বশেষ

শিশু অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিকে সম্মিলিতভাবে অগ্রাধিকার দিতে হবে ॥ নাছিমা বেগম

ঢাকা : শিশুর প্রতি যৌন শোষণ ও নিপীড়ন নিরসনে আন্তঃসীমান্ত পরামর্শ সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, শিশু অধিকার নিশ্চিত না হলে মানবাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই শিশু অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিকে সম্মিলিতভাবে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে তদারকি এবং নজরদারি বৃদ্ধি করার মাধ্যমেই এ সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সার্ক শিশু সুরক্ষা প্রটোকলের আওতায় অভিন্ন শিশু সুরক্ষা কাঠামোর অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন তিনি। ইনসিডিন-বাংলাদেশ আয়োজিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন টেরে ডেস হোমস নেদারল্যাণ্ডস-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির। সভায় মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন ইনসিডিনি-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী। আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শিবনাথ রায়, সাবেক উপ-সচিব ড. আবুল হোসেন, এটিএসইসি সাউথ এশিয়ার চেয়ারম্যান মানবেন্দ্র নাথ মণ্ডল, ভারত ও নেপালের দায়িত্বপ্রাপ্ত টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস প্রতিনিধি থাঙ্গাপেরুমাল পোনপান্ডি, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী প্রমূখ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাছিমা বেগম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শিশুদের জন্য আইন করেছেন। বর্তমান সরকারও শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে সক্রিয় রয়েছে। তারপরও শিশুরা নির্যাতন ও পাচারের শিকার হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু মানুষের অসৎ আকাঙ্খার কারণে এধরণের ঘটনা ঘটছে। তাই নারী ও শিশু পাচার বন্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সরকারকে এধরণের আন্তঃদেশীয় সংলাপগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে মানবাধিকার কমিশন বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অতিরিক্ত সচিব শিবনাথ রায় বলেন, শিশু শ্রম, শিশু পাচার ও শিশুর উপর বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আইনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা নিয়ে হতাশা রয়েছে। সেই হতাশা কাটিয়ে উঠে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সহায়তায় আইন ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত শিশু ও কিশোর-কিশোরী সুরক্ষা কাঠামো গঠন এবং তা বাস্তবায়নে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ মানবপাচার দমন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের শিশু শ্রম নিরসন জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আলোকে শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এ কে এম মাসুদ আলী। মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, নারী ও শিশু পাচার নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কাজের সাধারণ একটি ধারা রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে কাজের জন্য সমঝোতা স্মারক রয়েছে। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কাজের সুযোগ কম। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে সার্কের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেই। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে সার্কভূক্ত দেশগুলোতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পাচারের শিকার শিশুদের উদ্ধার থেকে পূনর্বাসন পর্যন্ত কার কি কাজ তা চিহ্নিত করতে হবে। অনলাইনের ফাঁদে পড়ে শিশুরা যাতে যৌন নির্যাতনের শিকার না হয়, সে বিষয়ে প্রতিরোধে ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কাজের সুযোগ কমছে বলে উল্লেখ করেন ভারতের অধিকারকর্মী মানবেন্দ্র নাথ মণ্ডল। তিনি বলেন, এই সুযোগ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সমন্বিত কার্যক্রম পরিচলনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, করোনাকালে প্রায় আটশ’ কন্যা শিশুকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। ভারতে ৫৪১টি বেসরকারী সংস্থা এই কাজ করছে। একই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য দেশের সংস্থাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় শিশু সুরক্ষার সকল অনুসঙ্গ পালনে সদস্য দেশ সমূহের অঙ্গীকার পূনর্ব্যক্ত করা হয়। এ অনুষ্ঠানে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল এর প্রায় ৭০ জন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। উক্ত সভায় আন্তঃসীমান্ত পর্যায়ে সার্ক শিশু সুরক্ষা নীতির প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং এ সম্পর্কিত আইন ও নীতি শক্তিশালীকরণে সকলের সমন্বয় এবং সংযুক্তি শিশুর প্রতি যৌন শোষণ, যৌন নিপীড়ন এবং নির্যাতন মোকাবেলায় কার্যকরী প্রভাব ফেলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
###

পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ১৭ এপ্রিল ২০২২ ইং

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "শিশু অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিকে সম্মিলিতভাবে অগ্রাধিকার দিতে হবে ॥ নাছিমা বেগম"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*