সর্বশেষ

ইউনিয়ন পরিষদের পৃথক বাজেট বরাদ্দে নিশ্চিত হয়েছে পরিবার পরিকল্পনা সেবা

সাকিলা পারভীন # দেশের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট ও পিরোজপুরের অধিকাংশ ইউনিয়নে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার শুন্যের কোটায় পৌছেছে। প্রজননক্ষম নারীরা পাচ্ছেন পরিবার পরিকল্পনা সেবা। এর পিছনে জাতীয় বাজেটের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পৃথক বাজেট বরাদ্দ ও সমন্বিত সেবা কার্যক্রম কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাট গম্বুজ ইউনিয়নে এখন মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার শুন্য। গত দুই বছরে এই সফলতা এসেছে। এ ক্ষেত্রে বাজেটের সহজলভ্যতা পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করেছে। সেখানে স্থানীয়ভাবে এ্যাম্বুলেন্স ক্রয়, এমনকি স্থানীয়ভাবে ইজিবাইককে (ব্যাটারী চালিত তিন চাকার যান) এ্যাম্বুলেন্স (অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্টেচার/বেড ইত্যাদি স্থাপন করে) বানিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সাথে পরিবার পরিকল্পনার সেবার উপকরণ, সংযোগ সড়ক সংস্কারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছে। বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা নিশ্চত করা সম্ভব হয়েছে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ইব্রাহিম আলী আকুঞ্জি জানান, সাধারণভাবে আমরা গর্ভবতী সেবা, নিয়মিত চেকআপ, কিশোর-কিশোরীদের সেবা, ডেলিভারি করানো ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকি। এই সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ইজিবাইক এ্যাম্বুলেন্স খুবই উপকারী হয়ে উঠেছে। এতে জরুরি প্রয়োজনে অত্যন্ত কম খরচে রোগীরা সেবা গ্রহণ করেত পারছে। সেবা নিশ্চিত হওয়ায় মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার দ্রুত কমে এসেছে।

বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থ বারের মতো নির্বাচিত চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। তাদেরকে বাদ দিয়ে কোনভাবে উন্নয়ন সম্ভব নয়। আবার আজকের শিশুও আগামী দিনের সম্পদ। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকিগুলো সীমিত রিসোর্স নিয়ে যথা সম্ভব সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। সরকারের এই কাজকে আরও ত্বরান্বিত করতে ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন পরিষদ (উন্নয়ন পরিকল্পনা) বিধিমালা, ২০১৩ এর ৭(৬) নং বিধিতে প্রকল্প বা কার্যক্রম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতভিত্তিক বরাদ্দের নির্দেশনা রয়েছে। উক্ত বিধি মোতাবেক স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ (স্বাস্থ্যগত পরিচ্ছন্নতা ও পরিবার পরিকল্পনা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ইপিআই কর্মসূচি, যুবক ও মহিলা কল্যাণসহ সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড) খাতে সর্বনিম্ন ১০শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দের বিধান রয়েছে। এখন ইউনিয়ন পরিষদ (উন্নয়ন পরিকল্পনা) বিধিমালা ২০১৩ অনুযায়ী ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের বার্ষিক বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়। যেখানে পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন ও কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ বরাদ্দও রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মেরী স্টোপস’ ও ‘সুশীলন’ উৎসাহিত করেছে বলে জানান তিনি।

ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্বুদ্ধ করছেন ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে মেরী স্টোপসের সহযোগিতায় সুশীলন কাজ করছে বলে জানালেন সুশীলনের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গর্ভবতী মায়েদের সেবায় ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব বাজেটে পৃথক বরাদ্দ নিশ্চিত করতে সুশীলন দীর্ঘদিন কাজ করছে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে মাতৃত্বকালীন সেবা পৌছে দিতে সকল স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ও হাসপাতালে এএনসি অর্থাৎ প্রসবপূর্ব সেবা ও পিএনসি প্রসোবত্তর সেবা কার্যক্রম উন্নত করা হয়েছে। মিডওয়াইফ (ধাত্রী)সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মেরী স্টোপস-এর অ্যাডভোকেসি লীড মনজুন নাহার বলেন, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে গত ২০১৮ সাল থেকে স্থানীয় সরকারের অংশগ্রহণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মেরী স্টোপস ও সুশীলন বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা এবং সাতক্ষীরা জেলার ৩৭টি উপজেলার মোট ৩২৩টি ইউনিয়নে কাজ করছে। এই কাজের মাধ্যমে দ্রুত ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। সারাদেশেই কাজটি করা দরকার।

জানাগেছে, স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমকে সহজ করতে বিশিষ্ট নাগরিকদের অ্যাডভোকেসি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাগেরহাট জেলা ওয়াকিং কমিটির সদস্য ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন কালের কণ্ঠকে বলেন, স্থানীয় সরকারের পৃথক বাজেট বরাদ্দ, বাজেটের সঠিক বাস্তবায়ন এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে ওয়ার্কিং কমিটি কাজ করছে। এতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কাজের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) কাজী মহিউল ইসলাম বলেন, পরিবার পরিকল্পনা খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের অভাব রয়েছে। তবে কাজের সমন্বয় ও তদারকির সংকট সব থেকে ্েবশী। তাই সকলের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, স্থানীয় সরকার এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সমন্বিত কার্যক্রমের ফলে বাগেরহাট-পিরোজপুর অঞ্চলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
###

পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ১২ মে ২০২২ ইং

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "ইউনিয়ন পরিষদের পৃথক বাজেট বরাদ্দে নিশ্চিত হয়েছে পরিবার পরিকল্পনা সেবা"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*