ঢাকা : টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যস্থপনার জন্য ধারাবাহিক ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা। ‘টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : অংশীজনের সম্পৃক্ততা, শিখন ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা বলেছেন, ‘পচনশীল বর্জ্য শহুরে জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তুলেছে। কঠিন বর্জ্যের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক মানুষ। তাই জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।’ এ জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পভিত্তিক নয়, কর্মসূচিভিত্তিক নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনস্থ এলডি হলে ইউএসএআইডি ও কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের (সিপিআই) সহযোগিতায় দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে), বারসিক, ইনসাইটস ও কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর (কাপ) যৌথভাবে ওই সভার আয়োজন করে। ডিএসকে নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং ইউএসএআইডি’র প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ম্যাক্রি।
আলোচনায় অংশ নেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, সিপিআই’র চিফ অব পার্টি মাইনউদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিখা চক্রবর্তী ও আমেনা বেগম, গবেষক আমিনুর রসুল, কাপ নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াত প্রমুখ। সভার শুরুতে ধারণাপত্র উত্থাপন করেন গবেষক সানজিদা জাহান আশরাফী। সভার শুরুতে তরুণদের পক্ষ থেকে আব্দুর রহিম হাজারীবাগ এলাকার বর্জ্য পরিস্থিতি ও শাহিনুর আক্তার মিরপুরের বস্তিবাসীদের পরিস্থিতি তুলে ধরেন ।
সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে মো. তাজুল ইসলাম জানান, উন্নয়নের সাথে শিল্পায়ন বাড়ছে। এ থেকে বর্জ্যও বাড়ছে। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্জ্য থেকে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। সেটা নিয়ে আমরা এখন কাজ করব। আমাদের সঙ্গে অনেক সংস্থা কাজ করছে। তারা বিনিয়োগ করবে এবং আমরা তাদের বর্জ্য সরবরাহ করব।’ এতে দেশে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দেশে আইনের কমতি নেই। কিন্তু আইন আমরা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারি না। তেমনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে বস্তিবাসীদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া। এক্ষেত্রে বস্তিবাসীদের সংকট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা: দিবালোক সিংহ বলেন বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে করতে পারলে আগামীতে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি রোড মডেল তৈরি করতে সক্ষম হবো। সকলের সমন্বিত অংশগ্রহণে আমরা এটি করতে পারবো বলে আমাদের বিশ^াস।
সভায় বক্তারা বলেন, দেশে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য অর্জনে সম্প্রতি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১ পাশ হয়েছে। বিধিমালায় যুগান্তকারী বেশ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হলেও সামগ্রিকভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার কী কর্মকৌশল বা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে, তার কোনো সুস্পষ্ট পথরেখার ধারণা পাওয়া যায় না। ২০১৪ সালের বর্জ্য ডাটাবেসে করা অনুমান অনুসারে, ২০২৫ সালে মোট বর্জ্য ৪৭ হাজার টন উৎপন্ন হবে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে কঠিন বর্জ্য উৎপাদন ২০৩০ সালে ৫৭ হাজার টন এবং ২০৪০ সালে ৭৭ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে।
সভায় আরও বলা হয়, শহরের ৫০ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ হচ্ছে না। ফলে এসব বর্জ্য শহরে মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় পড়ে থাকা বর্জ্যের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষদের দুর্বিষহ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের ল্যান্ডফিলগুলো থেকে প্রচুর মিথেন নিঃসরণ হচ্ছে, যা কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে ১০০ গুণ বেশি ক্ষতিকর। তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের ল্যান্ডফিল ধারণা নিয়ে ভাবতে হবে।
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ২ নভেম্বর ২০২২
Be the first to comment on "টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থপনার জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক ও সমন্বিত উদ্যোগ"