সর্বশেষ

প্রথমবারের মতো ‘সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস’ গঠিত

ঢাকা : স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নেতৃত্বে এবং স্টপ টিবি পার্টনারশিপ-ইউএনওপিএস’র সহযোগিতায় আইসিডিডিআর,বি এবং প্রিপ ট্রাস্ট আয়োজিত এক সভায় সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে যক্ষ্মা মোকাবিলায় প্রথমবারের মতো রবিবার (১৮ জুন) এই সংসদীয় প্ল্যাটফর্মের গঠন ও এর কার্যক্রম সংক্রান্ত সভাটি বাংলাদেশ পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।

আইসিডিডিআরবি জানায়, যক্ষ্মা একটি সংক্রামক, প্রতিরোধ এবং নিরাময়যোগ্য রোগ হলেও বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী এটি অসংখ্য মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে যক্ষ্মা মোকাবিলা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ‘সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস’ গঠন একটি অগ্রণী পদক্ষেপ। কারণ, সংসদ সদস্যরাই পারেন তাদের অবস্থান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কথা জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আলোচনায় তুলে ধরতে। এই ককাস বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রভাবশালী সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হবে, যারা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যক্ষ্মা মোকাবিলায় প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসতে রাজনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবেন। বর্তমান যক্ষ্মা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়া জোরালো করার লক্ষ্যে এই ককাস অভ্যন্তরীণ সম্পদের বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।

সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের মো. হাবিবে মিল্লাতকে সভাপতি, ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে সহসভাপতি ও আরমা দত্তকে সাধারণ সম্পাদক করে সংসদীয় টিবি ককাস গঠন করা হয়। ককাসটি পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য একটি সেক্রেটারিয়েট থাকবে—যা জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও সংসদ সদস্যদের যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে কাঠামোগত সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে ককাস সদস্যদের একটি তালিকা এবং এর প্রতিশ্রুতির রূপরেখাও উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। তিনি এই ককাসের ঘোষণা দেন। যক্ষ্মা মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার জন্য অনেক সংসদ সদস্যও এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি প্রফেসর আ ফ ম রুহুল হক।

আইসিডিডিআর,বি-র ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. ফিরদৌসী কাদরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এবং সংসদ সদস্য আরমা দত্তকে তাদের দিকনির্দেশনা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক‌কে সংসদীয় ককাস গঠনে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান।

ড. কাদরী বলেন ‘আমি নিশ্চিত যে সম্মানিত সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস সাধারণ জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের যক্ষ্মা রোগ মোকাবিলা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং তা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়াবে। এই ককাসের মাধ্যমে যক্ষ্মা মোকাবিলায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হবে। তারা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই আমরা যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।’

সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী প্রফেসর আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘যক্ষ্মা দূর করা কারও একার পক্ষে করা সম্ভব না। তাই জনগণের সচেতনতার প্রয়োজন আছে।’

ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, আইসিডিডিআর,বি এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বলি আর প্রতিকারের ব্যবস্থা বলি, বিশ্বব্যাপী এর প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কমিয়ে ফেলা গেছে। তবে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয় যায়নি। এই ককাসের মাধ্যমে সম্পৃক্ত সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যারা সম্পৃক্ত আছেন, তারা যক্ষ্মা থেকে শিশু, বৃদ্ধ, তরুণ সমাজকে বাঁচানোর এই কার্যক্রমে একযোগে যুক্ত হবার সুযোগ পাচ্ছেন। এভাবে সবাইকে যদি আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে আমরা যক্ষ্মা আক্রান্তের হার শূন্যের কোঠায় না আনতে পারলেও অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবো। আপনাদের এই ককাসের সঙ্গে আমি আছি, থাকবো।’

সভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক, বেগম রওশন আরা মান্নান, আহমেদ ফিরোজ কবির, মো. হাবিবে মিল্লাত, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, নুরুন্নবী চৌধুরী, ফখরুল ইমাম, বেনজীর আহমেদ, পংকজ নাথ, প্রান গোপাল দত্ত, মোছা. শামীমা আক্তার খানম, বাসন্তী চাকমা, শবনম জাহান, লুৎফুন নেসা খান, নাজমা আকতার, ফেরদৌসী ইসলাম, আদিবা আনজুম মিতা, আরমা দত্ত, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, শামসুন নাহার, নার্গিস রহমান ও কানিজ ফাতেমা আহমেদ এবং আইসিডিডিআরবি’র ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. ফিরদৌসী কাদরী ও সিনিয়র টিবি মিটিগেশন অ্যান্ড কোর্ডিনেশন এডভাইজার, ডা. আজহারুল ইসলাম খান।

পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ১৮ জুন ২০২৩

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "প্রথমবারের মতো ‘সংসদীয় যক্ষ্মা ককাস’ গঠিত"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*