সাকিলা পারভীন : আজ ২৬ সেপ্টেম্বর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস পালিত হচ্ছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। কারোনা সংক্রমণ শুরু হলে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ হয়। দ্রুত কমতে থাকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা গ্রহণের হার। সারাদেশে সেই প্রভাব এখনো চলছে। এই প্রভাব মোকাবেলা করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জনে সচেতনতা মূলক প্রচারণা ও মনিটারিং জোরদারের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অ্যাডভান্স ফ্যামিলি প্লানিং নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করছেন বেসরকারি সংস্থা ‘টিম এসোসিয়েটস’-এর টীম লিডার পুলক রাহা। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্ধেকের বেশি নারী যৌনমিলন, জন্মনিয়ন্ত্রণ এমনকি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে না। এরপর কোভিড-১৯ বাস্তবতায় সারা বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতা, স্বাস্থ্য সেবায় বিঘ্ন এবং অপরিকল্পিত গর্ভধারণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। এই অবস্থায় ২০৩০ সাল নাগাদ জন্মনিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত সাফল্য, মাতৃমৃত্যু হার কমানো ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়াতে হবে। আর সেবার মান উন্নয়নে চিকিৎসক, প্যারামেডিক, এফডব্লিউভি (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) ও মাঠকর্মীদের নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বস্তবায়নে মনিটারিং জোরদার করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। করোনাকাল এই দিবসটির গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই সময়ে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হয়। ওই সময়ে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সরবরাহকৃত বিভিন্ন ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিশেষ করে খাওয়ার বড়ি, কনডম, দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির ইনজেকশন ও জরুরি বড়ির সংকট দেখা দেয়। ফলে জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশে প্রজননসক্ষম দম্পতির প্রায় অর্ধেক এখনো আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না। গত ৫ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে অনিয়মিত হয়ে পড়ার হারও বাড়ছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে খাওয়ার বড়ি নেওয়ার হার ৩৭ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে স্থায়ী পদ্ধতি নেওয়ার হার কমেছে ৩৩ শতাংশ। এছাড়া কপার টি প্রায় ২৯ শতাংশ, ইমপ্ল্যান্ট প্রায় ১৯ শতাংশ, ইনজেকশন ১৭ শতাংশ ও কনডম নেওয়ার হার ১৪ শতাংশ কমেছে। অবশ্য ইমপ্ল্যান্ট সেবা নেওয়ার হার ধারাবাহিকভাবে কমেনি; এর হারে ওঠা-নামা আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত বছরগুলোয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হলে স্বাস্থ্যসেবা চলে যায় নাগালের বাইরে। করোনার প্রভাব কমে গেলেও সে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদাসীনতা। সবমিলে থমকে গেছে এ সংক্রান্ত মাঠপর্যায়ের সেবা। দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনুসন্ধান চালিয়ে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচারের অভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে দম্পতিদের সচেতন করা যাচ্ছে না। ঘরে ঘরে প্রচারের ফলে আশির দশকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জনবহুল এই দেশে যে সাফল্য এসেছিল, সরকারের মনোযোগের অভাবে সেটি ব্যাহত হচ্ছে। ভবিষ্যতের জনবিস্ফোরণ ঠেকাতে এখন থেকেই সচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নির্ধারিত সময়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জন্মনিরোধ সেবা ও সরবরাহ কর্মসূচি (সিসিএসডিপি) ইউনিটের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ক্ষেত্রে যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। মোট প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে মা ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করে সেবার মান বাড়ানো হয়েছে।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং
Be the first to comment on "আজ বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস : জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে এখনো করোনার বিরুপ প্রভাব"