ঢাকা : যুদ্ধের থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে করোনা। যুদ্ধে যদি মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু হতো তার লাশ না নিয়ে সহকর্মীরা ফিরতো না। তেমনি অন্য কেউ মারা গেলেও মোহাম্মদ নাসিম তাকে নিয়ে ফিরতেন। কিন্তু করোনার কারণে নাসিমের মতো জাতীয় নেতার মুখটা শেষ দেখাও দেখতে পারছি না। এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো বেশী কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা এ সব কথা বলেন। দুই দিন বিরতির স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের মুলতবি অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে সম্পুরক কার্যসূচী শোক প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন স্পিকার। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। এসময় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ’র জীবন বৃত্তান্তসহ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এরপর মোহাম্মদ নাসিমের জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা হয়।
করোনা পরিস্থিতিতে গভীর শোকার্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় অংশ নেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের মতিয়া চৌধুরী, ডা. হাবিবে মিল্লাত ও মৃণাল কান্তি দাস, ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। এরপর এক মিনিট নিরাবতা পালন ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর দিনের অন্যান্য কার্যসূচী স্থগিত করে অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সদা হাসোজ্জল ও বিনয়ী মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা। এমপি-মন্ত্রী ও জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর সন্তান হয়েও তিনি অত্যন্ত সাদামাঠা জীবন-যাপন করতেন। জনগণের আস্থা অর্জন করেছিলেন। আমরা একই দল না করলেও তাকে দেখলে মনে হতো তাকে সকল কথাই বলা যায়। শত বিপদ ও ঝুঁকির মুখেও তিনি পিছু হটেননি। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তার মৃত্যুতে রাজনীতিতে অপুরণীয় ক্ষতি হলো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কারণে পিতা-পুত্র একসঙ্গে জেলে থাকার ঘটনা মোহাম্মদ নাসিমের ক্ষেত্রে ঘটেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় সামনে ছিলেন। বারবার পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রাজনীতিতে তিনি যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা জনগণ অনন্তকাল মনে রাখবেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে মোহাম্মদ নাসিমের সাহসী ভূমিকা তুলে ধরে ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কখনো ভাবিনি আমরা অন্য দলের। মনে হয়েছে, একই রাজনৈতিক পরিবারের। সকলকে সহজেই আপন করে নিতেন।
জাপা নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শুধু সরকারী দলের নেতা-কর্মীদের নয়, বিরোধী দলের খোঁজ-খবর রাখতেন তিনি। সংসদে আরো বেশী সক্রিয় ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিতেন। পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্র জীবন থেকে লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছেন। বিএনপি-জামায়াতের শাসন আমলে বহুবার বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, আজ সংসদের মুলতবি অধিবেশনে সম্পুরক বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে। গত ১০ জুন সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। পরদিন ১১ জুন সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর দুই দিনের জন্য সংসদ অধিবেশন মুলতবি করা হয়।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ১৪ জুন ২০২০ ইং
Be the first to comment on "মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু, রাজনীতিতে অপুরণীয় ক্ষতি"