ঢাকা: প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাতের একবছর পূর্ণ হলেও ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ এখানো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের আঘাত প্রায় নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর নানা কারণে এলাকাবাসীর ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুন। এই অবস্থা মোকাবেলা করে সুন্দরবন উপকূলের উন্নয়নে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি তুলেছেন বিশিষ্টজনরা। “ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এক বছর : ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারিনি মানুষ” শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে এই দাবি জানানো হয়।
আজ বৃহস্পতিবার বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স, সচেতন সংস্থা ও পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম আয়োজিত এই সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আলোচনায় অংশ নেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, খুলনার পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মণ্ডল, আন্তর্জাতি সংস্থা কেএনএইচ জার্মানীর প্রতিনিধি মাটিলদা টিনা বৈদ্য, গ্রীন ক্লাব অব বাংলাদেশ (জিসিবি) সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সদস্য সচিব মাধব চন্দ্র দত্ত, নাগরিক কমিটির নেতা আবুল কালাম আজাদ, মোংলা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. নূর আলম, আপন ফাউন্ডেশনের মো. আফতাবুজ্জামান, সচেতন সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার তুহীন পারভেজ, উন্নয়নকর্মী নিত্যানন্দ সরকার, অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা, এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, নীলিমা চক্রবর্তী, নৃপেন বৈদ্য, অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শীলু, সাংবাদিক আব্দুল আজিজ, রনজিৎ বিশ^াস, মোমিনুর রহমান প্রমূখ। সংলাপে সূচনা বক্তব্য উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল।
সংলাপে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ষাটের দশকে নির্মিত বাঁধগুলো ফসল চাষের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এসব বাঁধ দেখভালের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু বাঁধ ব্যবস্থাপনার অভাবে এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে পুরো দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল এখন ভয়াবহ সংকটের মুখে। এই সংকট মোকাবেলায় সস্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সংলাপে বক্তারা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ ঝুঁকি পূর্ণ এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেন, করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যে গত বছর সুপার সাইক্লোন আম্ফান উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এরপর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। শতাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই চলতি ঝড়ো মৌসুমে চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ওই অঞ্চলের জনগণ। ঝুঁকি মোকাবেলায় আগামী জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
সংলাপে উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক বোর্ড গঠনের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলকে দূর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। উপকূলীয় জনগণের নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফান দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে। এতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এক বছর পার হলেও সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষ।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ২০ মে ২০২১ ইং।
Be the first to comment on "নাগরিক সংলাপ : দূর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা সুন্দরবন উপকূলের উন্নয়নে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ দাবি"