সর্বশেষ

জলবায়ু ট্রাস্ট ফাণ্ডের প্রকল্প নড়াইল পৌরসভার ড্রেন নির্মাণ কাজে ধীরগতি

সাকিলা পারভীন # জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফাণ্ডের অর্থায়নে গৃহীত ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য নড়াইল পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। চলতি মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, তা হচ্ছে না। এছাড়াও পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন ৫৫ কিলোমিটার ড্রেনের স্থলে আছে মাত্র তিন কিলোমিটার। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নাগরিক সেবা বঞ্চিত নড়াইল পৌরবাসী।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে নড়াইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ৫০ বছরে অপেক্ষাকৃত নিচু জমির এই পৌরসভায় গড়ে ওঠেনি কোনো পরিকল্পিত ড্রেনেজ-ব্যবস্থা। এ পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, অথচ প্রয়োজন প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। ড্রেনেজ-ব্যবস্থা না থাকায় এখন সামান্য বৃষ্টিতেই নাকাল হচ্ছে পৌরবাসী। প্রতিবছরই বর্ষাকালসহ অন্য যে কোন মৌসুমের বৃষ্টিতে পৌরসভাজুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এবারও বর্ষা মৌসুমে একাধিকবার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে পৌরসভার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, দোকান, বাসাবাড়ি ও অফিস চত্বরে পানি জমে যায়। অনেক জায়গায় ঘরের ভেতর পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র। গত বর্ষা মৌসুমে ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকে রান্নাও করতে পারেনি। জমে থাকা পানির মধ্য দিয়েই অফিস-আদালতে যাওয়াসহ দৈনন্দিন কাজ সারতে হয়েছে। পৌরসভার দুর্গাপুর, ভওয়াখালী, কুড়িগ্রাম, মাছিমদিয়া, আলাদাতপুর, দক্ষিণ নড়াইল, মহিষখোলা, বরাশুলা, ভাটিয়া ও সিটি কলেজ পাড়ায় এ সমস্যা প্রকট বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

নড়াইল পৌর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, নড়াইল পৌর এলাকায় ৫৫ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র তিন কিলোমিটার। এতে বৃষ্টির পানি সহজে বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৯ সালে পহেলা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় দুই কোটি টাকার ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য নড়াইল পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রকল্পের আওতায় মহিষখোলা জেলখানা মোড় হতে শুরু হয়ে দূর্গাপুর মুজিবরের বাড়ি পর্যন্ত টব স্লাব দ্বারা আরসিসি ড্রেন নির্মাণ (রড দ্বারা পাথরের ঢালাই) করা হবে। যার দৈর্ঘ্য ৫৫৫ মিটার প্রস্থ্য ১৪০০ ও ১৮০০ মিলিমিটার এবং গভীরতা ১৩৫০ ও ১৭০০ মিলিমিটার হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। কারণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। গত বছর থেকে এই প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হলেও বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধন করা হয় চলতি বছরের ৩০ মার্চ। এরপর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজও বাধাগ্রস্থ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে দ্রুতই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বড় যে সমস্যা মনে হচ্ছে, পৌরসভার ড্রেন ও রাস্তা। আজ কিছুটা হলেও সমস্যা সমাধানের জন্য ড্রেনেজের কাজ শুরু হয়েছে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফাণ্ডের অর্থায়নে নেওয়া এই প্রকল্পের কাজ দ্রুতই শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রথম শ্রেনীর এই পৌরসভার বেশির ভাগ ড্রেনই অপরিকল্পিত ও বিচ্ছিন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে। আর শহরসংলগ্ন চিত্রা নদী ছাড়া পানি নিষ্কাশনের তেমন কোনো মাধ্যম নেই। এমতাবস্থায় পৌরবাসীর কষ্ট লাঘবে পরিকল্পিত ড্রেনেজ-ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নড়াইলের নাগরিক নেতা নিহার রঞ্জন সাহা জানান, ১৯৭২ সালে গঠিত নড়াইল পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও ড্রেনেজ-ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। বিলসহ নিচু জমিতে অপরিকল্পিত বাড়িঘর করায় সামান্য বৃষ্টিতেই প্লাবিত হচ্ছে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন বাড়িঘর গড়ে উঠলেও তেমন কোনো রাস্তা নেই। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ঘর নির্মাণ করায় সহজে পানি বের হতে পারে না। নতুন এসব রাস্তা এতটাই সরু, একটা ভ্যান বা রিকশাও চলাচল করতে পারে না। অনেক এলাকায় শুধু হাঁটার মতো পথ রয়েছে। ফলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে মাষ্টারপ্লান অনুযায়ী প্রকল্প প্রণয়ন ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিষয়ে নেটওয়ার্ক অন কাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসি’বি)’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক (রিসার্চ এন্ড এ্যাডভোকেসি) ড. মুহাম্মদ ফররুখ রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা কার্যক্রমে বাংলাদেশ নেতৃত্বের স্থানে রয়েছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফাণ্ডের অর্থে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মনিটারিং জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সরকার জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা-২০০৯ প্রণয়ন করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম এই ধরনের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফাণ্ড (তহবিল) গঠন করা হয়েছে। ওই ট্রাস্ট ফাণ্ডের অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতির পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
###

পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ৩ ডিসেম্বর ২০২১ ইং

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "জলবায়ু ট্রাস্ট ফাণ্ডের প্রকল্প নড়াইল পৌরসভার ড্রেন নির্মাণ কাজে ধীরগতি"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*