সর্বশেষ

বিএনপিএ’র নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অবহিতকরণ সভায় স্পিকার

ঢাকা : নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমন চৌধুরী, এমপি। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ বা যুদ্ধ পরবর্তীকালে নারী ও মেয়েরা সবচাইতে বেশি সহিংসতার শিকার হয়। তাই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত ১৩২৫ রেজুলেশনটি (প্রস্তাব) একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কেননা এতে প্রথমবারের মতো শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় জেন্ডার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে নেওয়া জাতীয় পরিকল্পনা আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে এনেছে।

বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইউএন উইমেন-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন তিনি। বিএনপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সভায় স্পিকার বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগে নারীর ওপর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে নারীর সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় ওই জাতীয় পরিকল্পনাটি যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরী। তিনি আরো বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নারীর সহজাত। প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর এই বৈশিষ্ট্যকে আরো পরিশীলিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বড়ধরণের সুফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সভায় ইউএন উইমেন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, নারীর শান্তি ও নিরাপত্তায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনাটি স্থানীয়করণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। জাতীয় পরিকল্পনার সময়সীমা যেহেতু ৩ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এক্ষেত্রে বাজেট বৃদ্ধির বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। তিনি বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি ও সহযোগিতার বিষয়টি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার নারীর শান্তি ও নিরাপত্তায় জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রভূত সাফল্য লাভ করেছে। জাতীয় পরিকল্পনাটি স্থানীয়করণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুরুষ ও ছেলেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কানাডিয়ান হাইকমিশনারের রাজনৈতিক কাউন্সেলর ব্রাডলি কোটস বলেন, নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে সিভিল সোসাইটির পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও কানাডা সরকারের সমন্বিত ভাবে কাজ করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল (ইউএন উইং) তৌফিক ইসলাম শাতিল বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে জাতীয় পরিকল্পনাটির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত আরো ৩ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সমাজের সকল স্তরের নারীদের দক্ষতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করা জরুরী। এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যবৃন্দ নিজ নিজ কর্ম এলাকায় ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করছি।

সভাপতির বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজ বিভিন্নভাবে বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার। এই বৈষম্য, সহিংসতা ও দ্বন্দ্বময় পরিস্থিতির মূলে রয়েছে, পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যবাদ, গণতন্ত্র সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক ও একপেশে ধারণা ও চর্চার বিস্তার এবং নারীবিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা। যার মাধ্যমে সংবিধানের সমানাধিকারের নীতির লঙ্ঘন ঘটে চলেছে। নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এসব মূল কারণ নিয়ে কাজ করা দরকার।

জাতীয় কর্মপরিকল্পনাটি উপস্থাপনকালে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ শিপা হাফিজা বলেন, উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি, শুধু নারীর শান্তি বা নারীর নিরাপত্তার বিষয় না, এটি সার্বিকভাবে একটি সমাজের সব মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যেভাবে নারীরা নির্যাতন, নিপীড়ন ও অবমাননার শিকার হয়, তাতে সমাজে বৈষম্য ও অনিরাপত্তা বিরাজ করে। এই কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে পারলে তা কেবল নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতা নিরসনেই ভূমিকা রাখবে না, বরং বাংলাদেশ একটি শান্তির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

সভায় আরো বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, আরমা দত্ত, সেলিমা আহমেদ, আবিদা আঞ্জুম মিতা, শবনম জাহান, সৈয়দা রুবিনা আক্তার, কাজী কানিজ সুলতানা, মনিরা সুলতানা, মোসাম্মৎ খালেদা খানম, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, হোসনে আরা, অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরীন, জিন্নাতুল বাকিয়া, সুলতানা জাহান ও নার্গিস রহমান প্রমুখ।
###

পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ৯ নভম্বের, ২০২২ ইং

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Be the first to comment on "বিএনপিএ’র নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অবহিতকরণ সভায় স্পিকার"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*