ঢাকা : আন্তঃসীমান্ত নদ-নদীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক আইন থাকলেও ভারত অধিকাংশ সময় এসব আইনের তোয়াক্কা করছে না। এরইমধ্যে তারা (ভারত) স্বীকৃত আন্তঃসীমান্ত ৫৪ নদীর মধ্যে ৩৬টি নদীর ওপর মোট ৫৪টি বাঁধ (ব্যারেজ) এবং ড্যাম তৈরি করেছে। ফলে এসব বাঁধ ভাটি অঞ্চলে (বাংলাদেশ) পানির স্বাভাবিক ও যথাযথ প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
আজ বুধবার রাজধানীর পানি ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘অভিন্ন নদীতে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার’ বিষয়ক বিশেষ সেমিনার এমন তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)সহ ২৯টি পরিবেশবাদী সংগঠন আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির অধিকার ও হিস্যা আদায়ে ভারতের সাথে শীঘ্রই আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এই আলোচনা করা হবে এবং আলোচনার ফলাফলও জনগণকে জানানো হবে।
ওই আলোচনায় জোরালো ভাবে বাংলাদেশের দাবি জানানো হবে উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টি অত্যন্ত জটিল হলেও জরুরি তথ্য ভাগাভাগি রাজনীতি নয়। কোথায় কোথায় স্ট্রাকচার, কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত তা জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে জানমালের ক্ষতি ও অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে একটা দেশ এককভাবে যেতে পারে না, দুটো দেশকে যেতে হয়। বৃষ্টির পানির তথ্য শেয়ার করা ইস্যুটি মানবিক। মানুষকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, শুধু আন্তর্জাতিক নদীর হিস্যাই নয় অভ্যন্তরীণ নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা তাই সম্মিলিত ভাবে বাংলাদেশের নদীগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে।
বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মো. এজাজ। বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তৃতা করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার উজানে ভারত, নেপাল ও চীনের অংশে একতরফা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেওয়ায় এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ড্যাম তৈরি করে পানি সরিয়ে নেওয়ার কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানি প্রাপ্যতা ও নাব্যতা শুষ্ক মৌসূমে ব্যাপকভাবে কমেছে। শুধু গঙ্গা নদীর অববাহিকাজুড়ে ভারতের ১৮০টির বেশি বাঁধ দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স এলাকায় বয়ে যাওয়া অভিন্ন নদীতে ভারতের প্রায় ৩০টি বাঁধ, ডাম ও পানির সংরক্ষণাগার রয়েছে। সিকিমের পর্বতশৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন, ভারত ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লাইফ লাইন বলে খ্যাত তিস্তা নদীর ওপর ১০টির বেশি বাঁধ-ব্যারাজ ও জলাধার নির্মাণ করেছে ভারত। আরো ৫টি বাঁধ প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে বাংলাদেশের জন্য অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তঃসীমান্ত নদীতে নির্মিত ভারতের বিশেষ ৩টি বাঁধ।
সেমিনারে আন্তঃসীমান্ত নদী রক্ষায় বেশকিছু সুপারিশ ও দাবি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে পুনরায় গঠন করে দেশের অভ্যন্তরে ও প্রতিবেশী দেশের সব আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যমান গঙ্গা চুক্তিটি সংশোধন করে নবায়নের বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। তিস্তা চুক্তি করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গঙ্গা-যমুনা-মেঘনা অববাহিকা অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে পানি কূটনীতিকে বাংলাদেশের সব কূটনীতির কেন্দ্র বিন্দুতে রেখে উদ্যোগ নিতে হবে। অবশিষ্ট আন্তঃসীমান্ত নদী খুঁজে বের করে স্বীকৃতির দাবি জানাতে হবে। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তি করে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করাসহ জাতিসংঘের নদী কনভেশন (১৯৯৭) সনদে বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষর ও যৌথ নদী কমিশনকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে সক্রিয় করতে হবে। একইসাথে আন্তঃসীমান্ত নদী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আন্তঃসীমান্ত নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের শিল্প দূষণ বন্ধ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পানি-পলি ব্যবস্থাপনা এবং আন্তঃসীমান্ত বাঁধের প্রতিও গুরুত্বারোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং
Be the first to comment on "আন্তঃসীমান্ত ৩৬টি নদীর ওপর ৫৪টি বাঁধ দিয়েছে ভারত"