ঢাকা : মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুর্শিদ বলেছেন, শিশুদের সার্বিক কল্যাণ সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। যা পূরণে ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান (আইসিবিসি)’ প্রকল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প অন্যান্য প্রকল্পের জন্য অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। কারণ এর মাধ্যমে সুরক্ষিত পরিবেশে শিশুদের নির্ভয়ে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
আইসিবিসি প্রকল্পের বেজলাইন জরিপ ও নলেজ, অ্যাটিচুড ও প্রাকটিস এনালিসিসের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) আয়োজিত সেমিনারে তিনি আরো বলেন, শিশুর সামগ্রিক বিকাশ, যত্ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত, তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে যাবতীয় সেবাসমূহ নিশ্চিত, এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের চাইল্ড কেয়ারে এবং ছয় থেকে দশ বছরের শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং শিশুদের সুরক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। যেসব জেলার শিশুরা আইসিবিসি প্রকল্পের আওতার বাইরে আছে, তাদেরকে কিভাবে নিরাপদ রাখা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেন এবং সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সুস্থ জাতি গঠনে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা পালনে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগমের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তৃতা করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, গ্লোবাল অর্গানাইজেশন সিনারগোসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এষা হুসেইন, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক কেলি লারসন, বাংলাদেশ প্রারম্ভিক শিশু বিকাশ নেটওয়ার্কের চেয়ারপার্সন ড. মনজুর আহমেদ, আইসিবিসি প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুল কাদির প্রমূখ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিআইপিআরবি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান। তিনি শিশুযত্ন সম্পর্কে তার প্রধান যত্নকারীর জ্ঞান, মনোভাব ও আচরণ যাচাই সংক্রান্ত ফলাফল তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে শিশুদের সুষ্ঠুভাবে দেখাশোনা করা, সুস্বাস্থ্য, পর্যাপ্ত পুষ্টি, নিরাপত্তা ও সুরক্ষাসহ শিশুদের পানিতে ডুবা ও অন্যান্য ইনজুরীতে মৃত্যুর সার্বিক অবস্থার বিষয়গুলো রয়েছে। এসকল বিষয়ে উন্নতি সাধনের জন্য কার্যকরী পদ্ধতিসমূহ প্রবন্ধের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিশু একাডেমি দেশের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অন্যতম ফলপ্রসূ সমন্বিত পদক্ষেপ এই প্রকল্প। জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষিত জীবন গড়তে আইসিবিসি প্রকল্প সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়, বাংলাদেশে এক থেকে ৯ বছরের শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে সাধারণত বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত জলাধারে ও দিনের প্রথম ভাগে। গ্রামাঞ্চলে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার এ হার শহরের চাইতে বেশি, যার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে সেখানে পুকুর আর ডোবার মতো ছোট ছোট জলাধারের সংখ্যা বেশি। এজন্য ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ৮ হাজারটি সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করা হবে। দুই লাখ শিশুকে এ প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদান করা হবে। ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের জন্য এক হাজার ৬০০টি ভেন্যুতে সাঁতার শেখানো হবে। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশু-যত্ন প্রদানের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভূমিকা পালনের বাইরেও কেন্দ্রগুলো শিশুদের পাশাপাশি তাদের মা-বাবাদের জন্য শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠবে, খেলার মাধ্যমে ভালোভাবে শেখা, ভালো অনুশীলনগুলোকে সংগ্রহ করে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এটি শিশুদের মানসিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, স্বাস্থ্যবিধি ও পুষ্টি বিষয়ক উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
###
পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ইং
Be the first to comment on "শিশুদের সার্বিক কল্যাণে আইসিবিসি প্রকল্পের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ॥ শারমিন মুর্শিদ"